বোরো মৌসুমে ফসলের ঠন্ডা জনিত সমস্যার সমাধান
December 31, 2013
December 29, 2013
বোরো মৌসুমে ব্রি ধান ৫০ এর চাষ পদ্ভতি
ব্রি ধান৫০
জাত উদ্ভাবন
ব্রি ধান৩০ এর সাথে ইরি থেকে প্রাপ্ত কৌলিক সারি আইআর ৬৭৬৮৪ বি এর সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে ব্রি ধান৫০ এর গবেষণা শুরু হয়। পরে সাত বছর ধরে প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে একটি বিশুদ্ধ অগ্রবর্তী সারি নির্বাচন করা হয় যার কৌলিক সারি নং-বিআর ৪৯০২-১৬-৫-১-১, ইহাকে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো মৌসুমে বিআর২৮ জাতের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায় ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় এই অগ্রবর্তী কৌলিক সারিটিকে উফশীজাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৮ সালে এই অগ্রগবর্তী কৌলিক সারিটিকে দেশের প্রথম সুগন্ধি এবং রপ্তানিযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে 'ব্রি ধান৫০' এবং জনপ্রিয় 'বাংলামতি' নামে সারাদশে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়।
ব্রি ধান৩০ এর সাথে ইরি থেকে প্রাপ্ত কৌলিক সারি আইআর ৬৭৬৮৪ বি এর সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে ব্রি ধান৫০ এর গবেষণা শুরু হয়। পরে সাত বছর ধরে প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে একটি বিশুদ্ধ অগ্রবর্তী সারি নির্বাচন করা হয় যার কৌলিক সারি নং-বিআর ৪৯০২-১৬-৫-১-১, ইহাকে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো মৌসুমে বিআর২৮ জাতের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায় ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় এই অগ্রবর্তী কৌলিক সারিটিকে উফশীজাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ড ২০০৮ সালে এই অগ্রগবর্তী কৌলিক সারিটিকে দেশের প্রথম সুগন্ধি এবং রপ্তানিযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে 'ব্রি ধান৫০' এবং জনপ্রিয় 'বাংলামতি' নামে সারাদশে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়।
বৈশিষ্ট্য
·
অঙ্গজ
অবস্থায় গাছের আকার বিধান ২৮ এর চেয়ে খাটো, পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ৮০-৮৫
সেন্টিমিটার।
·
এ
ধানের জাতের ডিগ পাতা হেলানো এবং লম্বা।
·
এ
ধানের দানা পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি জাতের মত চিকন। তবে দানার অগ্রভাগ একটু বাঁকানো।
·
এ
জাতের জীবনকাল ১৫২-১৫৫। ১০০০টি
পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২১ গ্রাম।
·
উপযুক্ত
পরিচর্যায় ব্রি ধান৫০ চাষ করলে ৬.০-৬.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
সনাক্তকারী গুণ
·
ব্রি
ধান ৫০ ঢলে পড়া প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন যা ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি জাতে নেই।
·
এ জাতে
পরিপক্ক শিষগুলো ডিগ পাতার উপরে অবস্থান করে বিধায় পুরো ক্ষেত ম্যাটের মত দেখায়
যা খুব আকর্ষনীয় হয়।
·
এর
পরিপক্ক কাল ১০০% ফুল আসার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয় যা অন্যান্য উফশী জাতে
দেখা যায় না।
·
ব্রি
ধান ৫০ এ সুগন্ধ আছে যা ফুল আসার সময় মাঠে গেলেই অনুভব করা যায়।
·
এ
ধানের ফলন ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতির চেয়ে ১ টন বেশি।
·
এর
চালের আকার পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি চালের অনুরূপ এবং এ্যামাইলোজের মাত্রা
প্রায় ২৮%।
আঞ্চলিক উপযোগিতা
লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের
প্রায় সকল বোরো চাষাবাদ অঞ্চল বিশেষ করে বিধান ২৮ জাতের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায়
এবং উত্তরাঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ
কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোর অঞ্চলে জাতটির অধিক ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
চাষ উপযোগী জমি
বেলে দোআঁশ, এঁটেল
দোআঁশ, উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমি ব্রি ধান ৫০ চাষের জন্য উপযুক্ত। যে জমিতে ব্রিধান ২৮ এর চাষ হয় সে
জমিতে ব্রি ধান ৫০ চাষাবাদ করা যাবে।
চাষাবাদ পদ্ধতি
জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি ব্রি
ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯ জাতের ধানের চাষাবাদ পদ্ধতির মতই। নিম্নে এ জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি
সম্পর্কে কিছু বিবরণ দেয়া হলো।
বীজ বাছাই, শোধন ও জাগ দেওয়া
পুষ্ট বীজ বাছাই করার পর বীজ
শোধন করা প্রয়োজন। এক
কেজি বীজ শোধন করার জন্য ৩ গ্রাম ব্যাভিস্টিন ওষুধ এক লিটার পানিতে মিশিয়ে
সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর শোধনকৃত বীজ কাপড় বা চটের ব্যাগে ভরে ঢিলা করে বেঁধে পানিতে
২৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর চটের ব্যাগ পানি থেকে তুলে কাঠের উপর রেখে পানি ঝরাতে হবে। তারপর বাঁশের টুকরি বা ড্রামে শুকানো
খড়ের মাঝে বীজের ব্যাগ রেখে তার উপর আবারও শুকানে খড় দিয়ে ভালভাবে চেপে তার উপর
ইট বা কাঠ অথবা যে কোন ভারী জিনিষ দিয়ে চাপা দিতে হবে। । এভাবে জাগ দিলে ৪৮ ঘন্টা বা দুই দিনেই
ভাল বীজের অংকুর বের হবে এবং কাদাময় বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে।
বীজতলা তৈরি, বীজের হার ও বপন সময়
দোয়াঁশ ও এঁটেল মাটি বীজতলার
জন্য ভাল। বীজতলার
জমি অনুর্বর হলে প্রতি বর্মমিটার জমিতে ২ কেজি হারে অথবা প্রতি শতাংশ জমিতে ২ মণ
পঁচা গোবর বা আবর্জনা সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেন্টিমিটার পানি সেচ
দিয়ে দু-তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি ভালভাবে
আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা, খড়
ইত্যাদি পচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় জমি তৈরি করতে হবে। শেষ জমি তৈরির সময় প্রতি শতকে ১০ গ্রাম
ফুরাডান, ১৬০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৮০ গ্রাম এমপি প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ৩ মিটার লম্বা ও ১ মিটার চওড়া
বেড তৈরি করতে হবে। বেডের
উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। দুটি বেডের মাঝখানে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার
নালা রাখতে হবে যা বীজতলায় পানি দিতে এবং প্রয়োজনে পানি নিস্কাশনে সহায়ক হয়। এক শতক (৪০ বর্গমিটার) পরিমাণ
বীজতলায় ৩.৫-৪.০ কেজি বীজ বোনা দরকার। এরূপ ১ শতক বীজতলার চারা দিয়ে প্রায় ২ বিঘা জমি রোপণ করা যাবে। নভেম্বরের ৫ থেকে ২৫ তারিখের (২০
কার্তিক থেকে ১০ অগ্রহায়ণ) মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার
বাড়-বাড়তি ব্যাহত হয়। এ
কারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায়
এবং চারার বাড়-বাড়তি বৃদ্ধি পায়। বীজতলায় চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম করে
ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলেই চলে। ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম
করে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার।
সার প্রয়োগ
ব্রি ধান৫০ এর সারের মাত্রা
ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ জাতের মতই। নিম্নের ছকে রোপণকৃত জমির জন্য বিভিন্ন প্রকারের সারের মাত্রা উল্লেখ
করা হলো-
সারের মাত্রা
ব্রি ধান৪৯ এর চাষাবাদে সারের
মাত্র বিআর১১ ধানের জাতের মতই। এজন্য প্রয়োজনীয় সারের মাত্রা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
সার
|
কেজি/হেক্টর
|
কেজি/বিঘা
|
গ্রাম/শতাংশ
|
ইউরিয়া
টিএসপি
এমপি
জিপসাম
দস্তা
|
২৫০
১২০
১২০
১০০
১০
|
৩৩
১৬
১৬
১৩
১
|
১০০০
৪৮০
৪৮০
৪০০
৪০
|
জমি তৈরি ও প্রাথমিক সার
প্রয়োগ
জমিতে হেক্টরপ্রতি ৩-৫ টন
পরিমাণ জৈব সার ভালভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দুটি চাষ আড়াআড়িভাবে দিয়ে ৭-৮
দিন পর ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর করে আবার আড়াআড়িভাবে দুটি চাষ ও দুটি মই দিয়ে
৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর শেষ চাষের সময় সবটুকু টিএসপি,
সবটুকু এমপি, অর্ধেক
জিপসাম এবং অর্ধেক দস্তা সার ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর ২-৩ বার মই দিতে হবে যেন জমি
সমান হয় এবং সমস্ত জমিতে একই গভীরতায় পানি থাকে। বাকী অর্ধেক জিপসাম এবং জিংক সালফেট
প্রথম কিস্তি ইউরিয়ার সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ
ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা
জমিতে কম সময় থাকে বিধায় এ সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি রোপণের ১০-১৫ দিনের মধ্যে
এবং দ্বিতীয় কিস্তি ২৫-৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ গোছায় ৪-৫টি কুশি অবস্থায় দিতে হবে। তৃতীয় কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন
পূর্বে অর্থাৎ রোপণের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে প্রয়োগ
করতে হবে।
সতর্কতা
ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময়
ক্ষেতে ২-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকতে হবে অথবা মাটিতে প্রচুর রস থাকতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে হাত বা
উইডার দিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে হবে যাতে সার মাটিতে ভালভাবে মিশে যায়। ফসলের অবস্থার উপর নির্ভর করে ইউরিয়া
সার প্রয়োগের মাত্রা কম বেশি করা যেতে পারে।
চারা রোপণ
অগ্রহায়ণের ২৫ তারিখ থেকে
পৌষের ১৫ তারিখের মধ্যে অর্থাৎ ১০-৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫-৪০ দিনের
চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি
গুছিতে ৩টি চারা ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরতায় রোপণ করা উত্তম। বেশি গভীরতায় চারা রোপণ করলে চারার
বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং কুশির সংখ্যাও কমে যায়। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫
সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১০ ইঞ্চি এবং প্রতি সারিতে গাছ থেকে
গাছের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার অর্থ ৬ ইঞ্চি বজায় রাখতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারার
দূরত্ব সঠিক হতে হবে। সঠিক
দূরত্বে চারা রোপণ করা হলে প্রত্যেক গাছ সমানভাবে আলো, বাতাস
ও সার গ্রহণের সুবিধা পাবে আর তা ভাল ফলনে সহায়ক হবে।
অন্তর্বর্তী পরিচর্যা
চারা রোপণের পর আগাছা দেখা
দিলে নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহার করে বা হাতে আগাছা পরিস্কার করতে হবে। সাধারণত প্রতি কিস্তি ইউরিয়া
উপরিপ্রয়োগের পর পরই আগাছা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে পরিস্কার করে
মাটির ভিতর পুঁতে দিলে জমির আগাছা যেমন নির্মুল হবে তেমনি আগাছা পচে গিয়ে জৈব
সারের কাগ করবে। জমিতে
১০-১৫ সেন্টিমিটার পানি রাখতে পারলে আগাছার উপদ্রব কম হবে। প্রয়োজনে আগছা নাশক সাথী ১০ ডব্লিও
জি প্রতি বিঘাতে ২০ গ্রাম এবং সানরাইজ ১৫০ ডব্লিও জি প্রতি বিঘাতে ১৪ গ্রাম
ব্যবহার করা যেতে পারে।
পোকা ও রোগ দমন
প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য
প্রথম কিস্তি ইউরিয়ার সাথে বিঘ প্রতি ২ কেজি ফুরাডান ৫জি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ব্রি ধান৫০, ব্লাস্ট, ব্যাক্টরিয়াল
লিফ ব্লাইট (পাতা ঝলসানো) ও মাজড়া পোকার আক্রমণ মাঝারি সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন। প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমন করতে
পারলে এই ধান চাষাবাদে শতকরা ২৫ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে। পোকার আক্রমণ বেশি হলে প্রয়োজনে
কীটনাশক যেমন- ফুরাডান/ভিটাফুরান ৫জি, মার্শাল ২০ ইসি, সানটাপ
৫০ এসপি, ডায়াজিনন ৬০ ইসি ইত্যাদি অনুমোদিত হারে স্প্রে করে দমন করা যেতে
পারে। ধানে সিথ ব্লাইট / খোল পোড়া, ব্লাস্ট
ও পাতা পোড়া রোগ হতে পারে। খোলপোড়া রোগ দমনের জন্য ফলিকুর (টেবুকোনাজল) ১০ মিলি ১০ লিটার
পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়াও কনটাফ (হেক্সাকোনাজল) বা
টিল্ট (প্রপিকোনাজল) স্প্রে করা যেতে পারে। পাতা পোড়া রোগ দমনের জন্য প্রতি বিঘায় ৫ কেজি এম.পি সার প্রয়োগ
করা যেতে পারে। ব্লাস্ট
রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি হেক্টরে ৮০০ মিলি লিটার হিনোসান অথবা ২.৫ কেজি হোমাই বা
টপসিন এম অথবা ৪০০ গ্রাম টুপার প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল কাটা, মাড়াই ও সংরক্ষণ
শিষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ
ধানের চাল শক্ত ও স্বচ্ছ এবং শিষের নিচের অংশে শতকরা ২০ ভাগ ধানের চাল আংশিক শক্ত
ও স্বচ্ছ হলে ধান ঠিকমত পেকেছে বেল বিবেচিত হবে। এ সময়ে ফসল কেটে মাঠেই বা উঠানে এনে
মাড়াই করতে হবে। কাঁচা
খলায় ধান মাড়াই করার সময় চাটাই, চট বা পলিথিন বিছিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
ফসল কাটার আগে জমি থেকে আগাছা
এবং সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অন্য ধানের জাত সরিয়ে ফেলতে হবে। সকল রোগাক্রান্ত গাছও অবসারণ করতে হবে। এরপর বীজ হিসেবে ফসল কেটে আলাদাভাবে
মাড়াই, ঝাড়াই ও ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে যাতে আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে
থাকে। তারপর পুষ্ট ধান বাছাই করতে কুলা
দিয়ে কমপক্ষে দু'বার ঝাড়তে হবে। প্লাস্টিক ড্রাম বা কেরোসিনের টিন
ভালভাবে পরিস্কার করে শুকিয়ে রোদে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে পাত্রে রাখতে হবে। পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে
যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। বীজ পাত্র মাটির মটকা বা কলসী হলে গায়ে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে
শুকিয়ে নিতে হবে। পোকার
আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১ মণ ধানে আনুমানিক ১৫০ গ্রাম নিম বা নিশিন্দা
অথবা বিষকাটালির পাতা গুঁড়া করে মিশিয়ে দিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
মিলিং পদ্ধতি
ব্রি ধান৫০ লম্বাকৃতি হওয়ায়
প্রচলিত মিলে মিলিং করলে চাল ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থাকে। এই ধান আতপ মিল করতে হলে 'রাবার
রোল হলার' যুক্ত অটো মিলে মাড়াই করতে হবে। এতে ধানের সুগন্ধ বজায় থাকবে। তাছাড়া অর্ধেক সিদ্ধ করা ধান 'রাবার
রোল হলার' যুক্ত অটো মিলে মাড়াই করলে শতকরা ৭০-৮০টি আস্ত চাল পাওয়া যাবে এবং
প্রাপ্ত চাল দেখতে ধবধবে সাদা হবে। স্থানীয় অথবা প্রচলিত মিলে মাড়াই করতে হলে ১২ ঘন্টা ধান ভিজিয়ে
রেখে পরে সম্পূর্ণভাবে সদ্ধ করে ভালভাবে শুকিয়ে মিলিং করতে হবে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে বাংলাদেশের সব
অঞ্চলেই ব্রি ধান৫০ মিলিং করা সম্ভব।
December 7, 2013
বার্লি চাষাবাদ পদ্ধতি
ফসলের নাম : বার্লি
পুষ্টি মূল্যঃ পুষ্টি মানের দিক থেকে বার্লি
গমের চেয়ে উন্নত ।
ভেজজ গুনঃ
ব্যবহারঃ
বার্লির অপর নাম যব। বার্লি কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল ফসল। বার্লি দিয়ে
শিশুর খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা হয়।
ভেজজ গুনঃ
ব্যবহারঃ
বার্লির অপর নাম যব। বার্লি কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল ফসল। বার্লি দিয়ে
শিশুর খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
এদেশের
বার্লির চাষ দীর্ঘদিন ধরে আসছে। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতে স্বল্প
ব্যয়ে এর চাষ করা হয়। পানি জমে না এমন বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি বার্লি চাষের
জন্য উপযুক্ত। জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকার ভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও
মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
বার্লির চাষ দীর্ঘদিন ধরে আসছে। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতে স্বল্প
ব্যয়ে এর চাষ করা হয়। পানি জমে না এমন বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি বার্লি চাষের
জন্য উপযুক্ত। জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকার ভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও
মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
জাত পরিচিতিঃ
বার্লির জাত
বারি বার্লি-১: ১৯৮৮ সালে সিমিট থেকে এ জাতটি বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন
পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে বারি বার্লি-১ নামে এ জাত অনুমোদন
করা হয়। এ জাতের উচ্চতা মাঝারি, ৮৫-৯০ সেমি । পাতার রং গাঢ় সবুজ ও কান্ড
শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । বীজ, শীর্ষ ৬ সারিতে অবস্থান করে । দানা
খোসাযুক্ত । দানার রং সোনালী । হাজার দানার ওজন ৩৬-৩৮ গ্রাম । এ দেশের
আবহাওয়ায় এর জীবনকাল ১০৮-১১২ দিন । এ জাতটিতে রোগ ও পোকার আক্রমন খুব কম।
সেচ ছাড়া চাষ করলেও হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে একটু সেচ
প্রয়োগে ফলন বৃদ্ধি পায়।
বারি বার্লি-২: বারি বার্লি-২ জাতটি
১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়। এ জাতের গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন । কান্ড শক্ত,
ফলে সহজে হেলে পড়ে না । জাতটি গোঁড়া পচা ও ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সম্পন্ন। দানা বড়। এ জাতটির হাজার বীজের ওজন ৩৫ -৩৮ গ্রাম এবং দানাতে ১২
-১৪% আমিষ থাকে। বারি বার্লি-২ সেচবিহীন চাষে হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন
এবং একটি সেচ সহ চাষে ২.৫ -৩.০ টন ফলন দেয়।
বপনের সময়ঃ
মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাস
(নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
বীজের
হারঃ বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি
এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে
দূরত্ব ২০ -২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে
বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বীজের
হারঃ বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি
এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে
দূরত্ব ২০ -২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে
বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সাধারণত অনুর্বর জমিতে বার্লি চাষ করা হলেও
সুপারিশমত সার প্রয়োগে এর ফলন
বাড়ানো যায়। বার্লির জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়। সারের নাম
সারের পরিমান/শতকে সারের পরিমান / হেক্টর
ইউরিয়া ৬৮৮-৭৪৯ গ্রাম ১৭০ -১৮৫ কেজি
টিএসপি ৪৬৬-৫০৬ গ্রাম ১১৫ -১২৫ কেজি
এমওপি ৩০৪-৩৪৪ গ্রাম ৭৫ -৮৫ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
বাড়ানো যায়। বার্লির জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়। সারের নাম
সারের পরিমান/শতকে সারের পরিমান / হেক্টর
ইউরিয়া ৬৮৮-৭৪৯ গ্রাম ১৭০ -১৮৫ কেজি
টিএসপি ৪৬৬-৫০৬ গ্রাম ১১৫ -১২৫ কেজি
এমওপি ৩০৪-৩৪৪ গ্রাম ৭৫ -৮৫ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সেচের
ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি
সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০- ৩৫ দিন
পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৫৫ -৬০ দিন পর (সেচের পর) প্রয়োগ করতে
হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২টি হালকা
সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী পাওয়া যায়। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের
মধ্যে ৮-১০সেমি দূরত্বে একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে
হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি
সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০- ৩৫ দিন
পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৫৫ -৬০ দিন পর (সেচের পর) প্রয়োগ করতে
হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২টি হালকা
সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী পাওয়া যায়। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের
মধ্যে ৮-১০সেমি দূরত্বে একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে
হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
বার্লির পাতা ঝলসানো রোগ দমন:
ডেক্সলেরা প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ
রোগটি ঘটে। সবুজ পাতায় ঈষৎ
বাদামি
রঙের ছোট ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এ সকল দাগ বাড়তে থাকে ও গাড়
বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে। দাগ একত্রিত হয়ে সমস্ত পাতা বাদামি বর্ণ
ধারণ করে এবং ঝলসানোর লক্ষণ দেখা যায়। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ,বীজ ও বায়ুর
মাধমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বায়ুর অধিক আদ্রতা ও ২৫ ডিগ্রী সে.
তাপমাত্রা এ রোগ বিস্তারের সহায়ক।
প্রতিকার
১. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১ মিলি ঔষধ আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
বার্লির গোড়া পচা রোগ দমনঃ
স্কেলেরোসিয়াম
রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল
ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোস'লে আক্রমণ করে। প্রথমে
গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রান্ত স্থানের
চারিদিক ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও
মাটিতে সরিষার দানার মত বাদামি থেকে কালো রংয়ের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা
যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে
এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিও
রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১. সব সময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
২. ভিটাভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করতে হবে।
রঙের ছোট ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এ সকল দাগ বাড়তে থাকে ও গাড়
বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে। দাগ একত্রিত হয়ে সমস্ত পাতা বাদামি বর্ণ
ধারণ করে এবং ঝলসানোর লক্ষণ দেখা যায়। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ,বীজ ও বায়ুর
মাধমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বায়ুর অধিক আদ্রতা ও ২৫ ডিগ্রী সে.
তাপমাত্রা এ রোগ বিস্তারের সহায়ক।
প্রতিকার
১. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১ মিলি ঔষধ আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
বার্লির গোড়া পচা রোগ দমনঃ
স্কেলেরোসিয়াম
রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল
ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোস'লে আক্রমণ করে। প্রথমে
গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রান্ত স্থানের
চারিদিক ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও
মাটিতে সরিষার দানার মত বাদামি থেকে কালো রংয়ের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা
যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে
এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিও
রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১. সব সময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
২. ভিটাভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করতে হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)