January 11, 2014

মুলার আধুনিক চাষাবাদ পদ্ভতি

মুলার আধুনিক চাষাবাদ পদ্ভতি
মূলা একটি পুষ্টিকর সবজি হলেও অনেকেই মূলা খতে পছন্দ করেন নামূলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছেএ দেশে মূলার আবাদ দিন দিন বাড়ছেবিশেষ করে অমৌসুমে মূলা আবাদের দিকে চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন


জমি ও মাটি
উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমিতে মূলা চাষ করা যায়সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ মাটি মূলা চাষের জন্য ভাল এটেল মাটিতে মূলার বাড় বাড়তি কম হয়মূলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মূলার বাড় বাড়তি ভাল হয়

জাত
একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের মূলার মাধ্যমে এ দেশে উচ্চফলনশীল মূলার আবাদ শুরু হলেও এখন মূলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছেআসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মূলা ১, বারি মূলা ২, বারি মূলা ৩, এভারেষ্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, বিএসবিডি ২১০১ এফ১, আনারকলি, দুর্বার, রকেট এফ১, সামার বেষ্ট এফ১, হ্যাভেন এফ১, মিনো আর্লি লং হোয়াই, বরকতি ৪০ এফ১, পাইলট এফ১, সিগমা ৪০ ইত্যাদিনিচে মূলার বিভিন্ন জাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল-

বারিমূলা ১ (তাসাকিসান)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়মূলার রঙ ধবধবে সাদা, বেলুনাকৃতি, লম্বা ও বড়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ১ কেজিদেশী মূলার মত অত ঝাঁঝ নেই প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন
বারিমূলা ২ (পিংকী)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়মূলার রঙ লালচে, নলাকৃতি, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫-৩০ সেন্টিমিটার, মধ্যমাকার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৯০০ গ্রামশাক খাওয়ার উপযুক্তপ্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন

বারিমূলা ৩ (দ্রুতি)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতিপাতার কিনারা ঢেউ খেলানো মূলার অর্ধেক অংশ মাটির উপরে থাকেপ্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৬০০ গ্রাম প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৪৫ টনজীবনকাল ৪০-৪৫ দিনরোগ পোকার আক্রমণ প্রতিরোধীএ দেশের আবহাওয়ায় ভাল বীজ উপাদন করা যায়প্রতি হেক্টরে প্রায় ১.২-১.৩ টন বীজ পাওয়া যায়

এভারেষ্ট এফ১- সারা বছর চাষ করা যায়একই জমিতে একই মৌসুমে ৩ বার চাষ করা যায়সহজে ফুল আসেনাবীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতি, ছোট আকারের, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৫০০ গ্রামশাক খাওয়ার উপযুক্তপ্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন
হোয়াইট প্রিন্স এফ১- মধ্য শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হয়বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়আগাম, দ্রুত বর্ধনশীল, ঝাঁঝহীন ও সুস্বাদু, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রামশাক খাওয়ার উপযুক্তপ্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন
মিনো আর্লি লং হোয়াইট- আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বুনতে হয় ও পৌষ ফাল্গুনে মূলা ওঠেবীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়মূলা লম্বা, সাদা, গ্রীস্মকালে ভাল হয়প্রতিটি মূলার গড় ওজন ২৫০-৪০০ গ্রামপ্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৫০ টন

বীজ হার ও বপন
আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মূলার বীজ বপন করা হয়প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়সাধারণতঃ ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার সুবিধে হয়সারিতে বুনতে হলে এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব দিতে হবে ২৫-৩০ সেমি.

সারের মাত্রা
সারের নাম সারের পরিমাণ
প্রতি শতকে প্রতি হেক্টরে
ইউরিয়া ১.২-১.৪ কেজি ৩০০-৩৫০ কেজি
টি এস পি ১.০- ১.২ কেজি ২৫০-৩০০ কেজি
এমওপি ০.৮৫-১.৪ কেজি ২১৫-৩০০ কেজি
গোবর ৩২-৪০ কেজি ৮-১০ টন

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার, টিএসপি ও অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবেইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিসি-তে ভাগে ভাগ করে বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ছিটিয়ে সেচ দিতে হবেমূলার বীজ উপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবেপ্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দিলেই চলে

পরিচর্যা
বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে৩০ সেমি. দূরত্বে একটি করে চারা রাখা ভালমাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবেপ্রতি কিসি-র সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবেআগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবেমাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
অনেক সময় মূলা পাতার বিট্‌ল বা ফ্লি বিট্‌ল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ক্ষতি করেএ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড সফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা পাতা খায়বীজ উপাদনের সময় ক্ষতি করে জাব পোকা

রোগ ব্যবস্থাপনা
মূলা পাতায় অল্টারনারিয়া পাতায় দাগ একটি সাধারণ সমস্যাএছাড়া হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগও দেখা যায়

ফসল সংগ্রহ ও ফলন
মূলা শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই তুলতে হবেঅবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছেতবুও কচি থাকতেই মূলা তুলে ফেলতে হবেএতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকেজাতভেদে হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৪০-৬০ টন

No comments:

Post a Comment