ধান পরিচিতি
বাংলাদেশের জলবা
য়ু ধান
চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এটি এদেশের একটি প্রাচীনতম ফসল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে
চতুর্থ বৃহত্তম। ধানই এদেশের
প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশের অর্থনীতি মূলত: ধান উৎপাদনের
উপর নির্ভরশীল। দেশে
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। নতুন
নতুন বাড়ী-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা ও
শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এর মূল কারণ। এর
উপর রয়েছে খরা, বন্যা, লবণাক্ততাসহ প্রাকৃতিক
দুর্যোগ। অপর
দিকে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে। চাষাবাদযোগ্য
ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে
ধান চাষাবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদার যোগান দেওয়া হচ্ছে। ধানের
ইংরেজি নাম Rice এবং বৈজ্ঞানিক নাম Oryza sativa।বীজ, বীজতলা ও চারা
ধান চাষাবাদ পদ্ধতি
উফশী ধানের ফলন
উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। তাই জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সব কাজ ধারাবাহিকভাবে বিচক্ষণতার
সাথে করতে হবে। নিয়মের হেরফের অথবা অনুমোদিত পদ্ধাত
ঠিকমতো অনুসরণ না করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং আশানুরুপ ফলন থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
জাত নির্বাচন
জমি, মৌসুম, পরিবেশ ও
শস্যক্রম বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা উচিত। সে
অনুযায়ী তালিকা ১ থেকে মৌসুমভেদে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ধান ও জাতের
বৈশিষ্ঠ্য
অধিক ফলন ও লাভের জন্য এলাকা ভিত্তিক চাষ উপযোগী সঠিক জাত নির্বাচন
একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। ভাল বংশ ও মা
ছাড়া যেমন ভাল সমন্বিত আশা করা যায় না তেমনি ভাল জাতের ভাল বীজ ছাড়া উত্তম ফসল
পাওয়া যায় না। নানা
জাতের বীজের মধ্যে
তাই সঠিক জাতটি নির্বাচন করে চাষ করা একজন কৃষকের প্রাথমিক দায়িত্ব। বর্তমানে
বাংলাদেশে হাইব্রিড, উফশী ও নানা ধরনের আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। দেশে
বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হচ্ছে। তবে কৃষকদের
কাছে সব জাতের গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে উদ্ভাবিত
এ পর্যন্ত ৪৬টি উফশী ওএকটি হাইব্রিড জাতকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিনা থেকে
উদ্ভাবিত জাতসমূহ যেমন বিনাশাইল, বিনাধান ৫, বিনাধান ৬ ও বিনাধান ৭ অনুমোদন দেয়া
হয়েছে। এ ছাড়া
বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত দু’টি জাত বিএইউ ৬৩ (ভরসা) এবং বিএ ইউ ২
অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীচে
এ দেশে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হল (তালিকা
১ ও ২)।
বিআর ১ : বোরো ও আউশ মৌসুমে আবাদযোগ্য এ ধানের জনপ্রিয় নাম চান্দিনা । কোন কোন অঞ্চলে এ ধান ৫৩২ আবার কোথাও কেবল ৭৬ নামে পরিচিত । চান্দিনা একটি আগাম জাত ।
বিআর ১ : বোরো ও আউশ মৌসুমে আবাদযোগ্য এ ধানের জনপ্রিয় নাম চান্দিনা । কোন কোন অঞ্চলে এ ধান ৫৩২ আবার কোথাও কেবল ৭৬ নামে পরিচিত । চান্দিনা একটি আগাম জাত ।
বিআর ২ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম মালা । এ ধানের মুড়ি খুব ভাল হয়। মালা বোরো
এবং রোপা আউশের একটি জাত।
বিআর ৩ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম বিপ্লব। এটি নাবী জাত হলেও বোরো মৌসুমে ফলনের জন্য সুখ্যাত। জাত রোপা আউস
এবং রোপা আমন মৌসুমেও ভাল ফলন দেয়।
বিআর ৪ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম ব্রিশাইল। এটি একটি আলোক-সংবেদনশীল জাত। তাই কেবল
রোপা
আমন মৌসুমে চাষাবাদ করার জন্য উপযোগী। এ ধানের বীজ বপনের সবচেয়ে ভাল সময় হলো আষাঢ়
মাস। এ সময় বীজ
বপন করলে শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে চারা রোপণ করা যায়। কার্তিকের
দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহে ফুল ফোটে। অগ্রহায়ণের
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ধান পাকে।
বিআর ৫ :
আমন
মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয়তা নাম দুলাভোগ। এর চালের
কালিজিরা চালের মতো সুগন্ধ আছে বলে পোলাও এবং পায়েশ তৈরির জন্য খুবই উপোযোগী। এটি আলোক-
সংবেদনশীল,
তাই এর
চাষাবাদ রোপা আমন মৌসুমের জন্য নির্ধারিত।
বিআর ৬ :
বোরো ও
আউশ মৌসুমের
জাত। ব্রি এ ধানটি
ইরি থেকে সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায়
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় বিআর ৬ নামে অনুমোদন পায়। এটি একটি
আগাম জাত।
বিআর ৭ : ঝড়-ঝঞ্ঝা কম হয় এমন
অঞ্চলে এ ধান রোপা আউশ ও বোরো মৌসুমের জন্য উপযোগী। কারণ ধান
বেশি
পেকে গেলে ঝড়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ ধান পাকার সাথে
সাথে কর্তন
করতে হবে। এর চালের
আকার প্রায় বাসমতির মতো, তবে এতে সুগন্ধি নেই।
বিআর ৮ : এ জাতের জনপ্রিয় নাম আশা। বোরো এবং আউশ মৌসুমের এ জাত ধান শীষের
সাথে শক্তভাব
লেগে থাকে । তাই
ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং শিলা বৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য এ ধান বিশেষ উপযোগী।
বিআর ৯ : বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষের
উপযোগী। বিআর ৯ এর
জনপ্রিয় নাম সুফলা। এ
জাতে ধান শীষের
সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে তবে আশা ধানের চেয়ে মজবুতি কিছু কম। এ জাত
শিলাবৃষ্টি-প্রবণ
এলাকার জন্য খুবই উপযোগী।
বিআর ১০:
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম প্রগতি। এজাতটি সহজে চেনা যায। কারণ ফুল ফোটার সময় শীষগুলো
ডিগপাতার নিচে থাকে এবং ডিগপাতার শেষ প্রান- হঠাৎ করেই সুচালো। প্রগতিকে রোপা
আমনের নাবী জাতের তালিকায় ফেলা যায়। জাতটিতে আলোক-সংবেদনশীলতা আছে। এ কারণে রোপণের জন্য ৪০-৫০ দিনের চারা
ব্যবহার করা যায়। তখন চারা বেশ
লম্বা হয় এবং হাঁটু পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। এ সব সুবিধার জন্য
খুলনার
লবণাক্ত এলাকায় রোপা আমন মৌসুমে জাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ জাতের
লবণাক্ত সহনশীলতা নেই, কিন' রোপা আমনে লবণাক্ত অঞ্চলে ক্ষেতে ২০-৩০ সেমি: গভীর পানি
থাকায় লবণাক্ত মাত্রা ধানের ক্ষতিকারক পর্যায় (৪ডিএস/মিটার) এর নিচে থাকে। স্বল্প আলোক
সংবেদনশীলতার জন্য এ জাত জ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল
কর্তন করা যায়। ফলে ঐ জমিতে
সময় মতো গম, ডাল
ও তেল ফসল আবাদ করা যায়।
বিআর ১১ :
এধানের
জনপ্রিয় নাম মুক্তা। এ
ধানের ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপরে থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। আমন মৌসুমের
এ জাতটি সারা দেশে জনপ্রিয়। মুক্তা ধান স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতাবিশিষ্ট। স্বল্প আলোক
সংবেদনশীলতার জন্য এ জাত জ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল
কাটা যায়; ফলে
ঐ জমিতে সময়মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করা যায়।
বিআর ১২ :
বোরো ও
আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম ময়না। এ ধানের গাছের নিচের অংশে বেগুনী রঙ দেখে
জাতটি সহজে চেনা যায়। এ
জাতটি দেশের যে সকল অঞ্চলে আগাম রোপা আউশ হয় ঐ সব এলাকার জন্য খুবই ভাল
জাত।
বিআর ১৪ : এর জনপ্রিয় নাম গাজী। বোরো ও আউশ
মৌসুমের এ জাত ছড়া বের হবার পর ডিগপাতা কিছুটা হেলে যায়; ফলে শীষ উপরে
দেখা যায় এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছড়ার উপরি ভাগের ধানে
হেলে শুঙ আছে। ধানের
গাছ বেশ উঁচু এবং খুব মজবুত, তাই ধান পাকার সময় মাঠ কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় না। এ জন্যে
দেশের বিল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে এটি খুবই জনপ্রিয়।
বিআর ১৫ : বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিআর ১৫ নামে অনুমোদন লাভ করে। এর জনপ্রিয় নাম মোহিনী । এ জাতের চাল প্রায় স্থানীয় শানীয় ধানের মতো, কিন' এটি নাবী জাত।
বিআর ১৫ : বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিআর ১৫ নামে অনুমোদন লাভ করে। এর জনপ্রিয় নাম মোহিনী । এ জাতের চাল প্রায় স্থানীয় শানীয় ধানের মতো, কিন' এটি নাবী জাত।
বিআর ১৬ : বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয়
নাম শাহীবালাম। এ
ধানের চাল পুরানো আমলের বালাম সমমানের এবং বর্তমানে মুড়ি তৈরি জন্য খ্যাতি লাভ করেছে।
বিআর ১৭ : ব্রি এ জাতটিকে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য এ জাতটি অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম হাসি । এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড শক্ত। ফুল ফোটার সময় এ ধানের শীষগুলো ডিগপাতার উপরে থাকে বলে সহজেই দৃষ্টি অকর্ষণ করে এবং জাতটির জীবনকাল মাধ্যম মেয়াদী।
বিআর ১৭ : ব্রি এ জাতটিকে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য এ জাতটি অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম হাসি । এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড শক্ত। ফুল ফোটার সময় এ ধানের শীষগুলো ডিগপাতার উপরে থাকে বলে সহজেই দৃষ্টি অকর্ষণ করে এবং জাতটির জীবনকাল মাধ্যম মেয়াদী।
বিআর ১৮ : ব্রি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার
উপযোগী বলে চূড়ান্ত
ভাবে নির্বাচন করে। বোরো
ও মৌসুমে এ জাতটি বিআর ১৮ নামে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের
জনপ্রিয় নাম শাহজালাল। এ
জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড মজবুত এবং নাবী।
বিআর ১৯ :
জাতটি
ধান পরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রি-তে আসে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এটি হবিগঞ্জ
ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা হয। বোরো মৌসুমের
এ জাতটি বিআর ১৯ নামে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম মঙ্গল। এর ডিগপাতা
ছোট এবং কান্ডের সাথে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ফুল ফোটার
সময় শীষ উপরে থাকে এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ জাতের গাছ বেশ উঁচু এবং ধান
পাকা পর্যন- খাড়া থাকে এবং নাবী।
বিআর ২০ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম নিজামী। এ জাতের ধানে অনেক সময় দাগ দেখা যায় । জাতটি
ছিটিয়ে,
লাইন করে
এবং
ডিবলিং করা যায়। বোনা
আউশের এ জাতটি দেশের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম,
কুমিল্লা,
নোয়াখালী
ও ময়মনসিংহ জেলার জন্য উপযোগী।
বিআর ২১ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম নিয়ামত। জাতটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিং পদ্ধতিতে বোনা যেতে
পারে। বোনা আউশের এ
জাতটি দেশের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর
সিলেট, চট্টগ্রাম,
কুমিল্লা,
নোয়াখালী
ও ময়মনসিংহ জেলার জন্য উপযোগী।
বিআর ২২ :
আমন
মৌসুমের উপযোগী। এ
ধানের নাম কিরণ। এটি
একটি আলোক সংবেদনশীল নাবী জাত। ঠিক নাইজারশইলের মতো। এর চাল আর
নাইজারশাইলের মধ্যে পার্থক্য নেই বললেই চলে; আবার ফলনও হয় দ্বিগুণ। দেশের
বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যা পরবর্তী সময়ে যে জমিতে যেভাবে নাইজারশাইলের চারা রোপণ
করা হয় সে সময়ে ওই জমিতে একই নিয়মে কিরণ রোপণ করা যাবে। কিরণে প্রতি
হেক্টর ১ টন ফলনও বেশি পাওয়া যাবে। রোপণের পর কিছু পরিচর্যা, যেমন জমিতে পানি সংরক্ষণ ও পরিমাণ মতো
নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হয়। জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কিরণ ধানের ৪০-৫০ দিনের চারা ১-১৫ আশ্বিন
পর্যন- রোপণ করা যায়। ১৫
আশ্বিনের পর এ ধান রোপণ করা উচিত নয়। প্রচলিত কুমড়াগইর, সাদামোটা
ইত্যাদি ধানের সাথেই ধান কাটা যায় এবং প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ১ টন ফলন বেশি
পাওয়া যায়।
বিআর ২৩ :
এ
ধানের জনপ্রিয় নাম দিশারী। এ ধানের চারা ও গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড খুবই শক্ত। এটি একটি
আলোক-সংবেদনশীল নাবী জাত। তাছাড়া এ ধান কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল। এসব গুণাবলীর
জন্য
জাতটি খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে রোপা আমনে খুবই জনপ্রিয়। বিআর ২২
ধানের মতোই বিআর ২৩ বন্যা-পরবর্তী এবং জোয়ার ভাটা অঞ্চলে নাবী রোপা
আমন হিসেবে চাষাবাদের জন্য উপযোগী।
বিআর ২৪ :
আউশ
মৌসুমের উপযোগী। এ
ধানের জনপ্রিয় নাম রহমত। এ জাতের গাছ খুবই শক্ত। ফুল ফোটার
সময় শীষ ডিগপাতার উপর থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ধানের
চাল
খুবই সুন্দর। জাতটি
ছিটিয়ে,লাইন
করে এবং
ডিবলিং পদ্ধতিতে
বোনা যায়। রহমত
কেবল বৃষ্টিবহুল এলাকার জন্য উপযোগী।
বিআর ২৫ :
আমন
মৌসুমের উপযোগী এ ধানের জনপ্রিয় নাম নয়াপাজাম। এ ধানের রং ও
আকৃতি এবং চালের
আকার একদম পাজামের মতো। উপরন্তু
এ ধান ৫-৭ দিন আগাম, গাছ অনেক মজবুত এবং ফলন দেয় বেশি। এ ধানের জীবন
কাল মধ্য মমেয়াদী। তাই
আষাঢ়ের শুরুতে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে কেটে রবি ফসল চাষাবাদ করা যায়।
বিআর ২৬ :
বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটিকে রোপা আউশের জাত হিসেবে চুড়ান্ত ভাবে
নির্বচান করা হয়। এ
ধানের জনপ্রিয় নাম শ্রাবণী। এটি আগাম জাত। এর কান্ড শক্ত এবং ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপর থাকে। তাই সহজেই
দৃষ্টি আকর্ষণ
করে। এর চাল
বালামের অনুরূপ। কিন্তু
ভাত নরম ও কিছুটা আঠালো। ধান শুকানোর পর দুই তিন মাস সংরক্ষণ করলে আঠালো ভাব অনেকাংশে
দুরীভুত হয় ।
ব্রি ধান ২৭ :
ধানের
গোড়ার দিকে পাতার খোল কিছুটা বেগুনি রঙের এবং ধানের মাথায় বেগুনি রঙের ফোঁটা
আছে। ধান পাকার
সাথে সাথে এ ফোঁটা ঝরে পড়ে যায়। এ জাতের গাছ উঁচু হলেও কিছুটা ঢলে পড়া প্রতিরোধ
ক্ষমতাসম্পন্ন। স্থানীয়
জাত গুলো যখন ধান
পাকার আগেই ঢলে পড়ে যায় তখন এ ধান মজবুতির সাথে দাঁড়িয়ে থাকে। বরিশাল
পটুয়াখালী
জেলার অলবণাক্ত জেয়ার-ভাটা কবলিত জমিতে বোনা ও রোপা আউশ হিসেবে চাষাবাদের
জন্য জাতটি খুবই উপযোগী।
ব্রি ধান ২৮ :
এটি
বোরো মৌসুমের আগাম জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের
ডিগপাতা হেলে যায়
এবং শীষ উপরে থাকে; ফলনেও ভাল তাই এর জনপ্রিয়তা ঘরে ঘরে।
ব্রি ধান ২৯ :
এটা
বোরো মৌসুমের আগাম নাবী জাতের ধান। এর সার গ্রহণ ক্ষমতা যেমন বেশি তেমনে কান্ড মজবুত আর ফলনের
পরিমাণ সর্বোচ্চ গুনে ও মানে ব্রি ধান ২৯ সকল আধুনিক ধানের সেরা।
ব্রি ধান ৩০ :
আমন
মৌসুমের এ জাতের ধানের আকার, রঙ, গাছের এবং জীবনকাল প্রায় বিআর-১০ এর মতো। পার্থক্য
শুধু ডিগপাতায় যা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ক্রমশ সুচালু। এর স্বল্প আলোক
সংবেদনশীলতা আছে। তাই
এর আবাদ পদ্ধতি বিআর ১০ এর অনুরূপ।
ব্রি ধান ৩১ :
আমন
মৌসুমের এ ধানে মৃদু আলোক-সংবেদনশীলতা থাকলেও বিআর ১১ এর চেয়ে ৫-৬ দিন আগাম। ধানের রঙ ও
আকৃতি বিআর ১১ এর মতোই, তবে আকারে একটু বড়। শীষ দেখতে আকর্ষণীয়,
ধানের
গাঁথুনি ঘন এবং শীষের গোড়ায় কিছু চিটা হয়। এ ধানের চাষাবাদ বিআর ১০ বা
বিআর ১১ এর অনুরূপ।
ব্রিধান ৩২ :
জাতটি
আলোক-সংবেদনশীল নয় বলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মধ্যে যখনই বীজ বপন করা হোক না কেন
এর জীবনকাল ১৩০ দিন। এ
সুবাদে জমিভেদে এ জাতের বপন-রোপণ নির্ধারণ করে অতি সহজেই রবি ফসল,
যেমন
গম, সরিষা
ইত্যাদি সঠিক সময়ে বপন করা যায়। এ ধান গাছের মজবুতি কিছুটা কম বলে ঢলে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সঠিক মাত্রায় সার
ব্যবহারে তা অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়। আবার ভাদ্রেও প্রথম সপ্তাহে রোপণ
করলে গাছের উচ্চতা কমে এবং কান্ডের মজবুতি বাড়ে।
ব্রি ধান ৩৩ :
এটি
রোপা আমনের সবচাইতে আগাম জাত এবং কোন আলোক সংবেদনশীলতা নেই এ জন্য ব্রি ধান-৩২
এর মতো এ ধানের চাষাবাদের পর অনায়াসেই সব রকম রবি ফসল করা যায়। এর কান্ড মজবুত। গাছের পাতা
প্রচলিত জাতের চেয়ে সামান্য চওড়া এবং ডিগপাতায় আগার দিক থেকে ২-৩ সেন্টিমিটার
নিচে কোঁচকানো ভাঁজ আছে। ধানের খোসায় ভাঁজে ভাঁজে হালকা বাদামি রঙ আছে। এ জাতটি আগাম
তাই এর বীজ বপনের তারিখটি তালিকা ২ দেখে নিতে হবে। আগাম বপন
করলে আগাম পাকবে। তবে
তাতে ইঁদুর, পোকা,
বৃষ্টি
ইত্যাদিতে
ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকবে।
ব্রি ধান ৩৪ :
এটি
একটি সুগন্ধি জাত। এ
ধান কালিজিরা ধানের মতো ছোট এবং ঘ্রাণ কালিজিরার কাছাকাছি। আমন মৌসুমের
এ ধানের চাল পোলাও তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। এ ধানে আলোক সংবেদনশীলতা আছে। গাছ বেশ
দুর্বল। তাই ফলন
বৃদ্ধিও জন্য এর বপন কিছুটা পরে অর্থাৎ শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে করা উচিত।
ব্রি ধান ৩৫ :
এটি
বাদামি গাছফড়িং প্রতিরোধশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে।
ব্রি ধান ৩৬ :
এটি
ঠান্ডা সহিষ্ণু বোর ধানের জাত হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং ব্রি ধান ৩৬ নামে অনুমোদন
লাভ করে। ব্রি ধান-২৮
এর মতোই এটি একটি আগাম জাত এবং চাল বালামের মতো।
ব্রি ধান ৩৭ :
রোপা
আমন মৌসুমের এ ধানের গাছ কাটারিভোগের চেয়ে অনেক মজবুত, কিন' ৫-৭ দিন
নাবী। ধানের রঙ,
চালের
আকার ও ঘ্রাণ ঠিক কাটারিভোগের অনুরূপ।এ ধানের শীষ দেখতে আকর্ষণীয়
এবং শীষে ধানের গাঁথুনি বেশ ঘন। ধানের শেষপ্রান- একটু বাঁকা এবং সুচালো থেকে ছোট শুঙ দেখা
যায়। এর ভাত ও
পোলাও কাটারিভোগের সমতুল্য। জাতটি আলোক সংবেদনশীল। অধিক উৎপাদন নিশ্চিত
করতে শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে বীজ বপন করা এবং প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ
দিতে হবে।
ব্রিধান ৩৮ : এর গাছ বাসমতি (ডি)-এর চেয়ে অনেক মজবুত। ধানের রঙ ও
শুঙ সোনালী সাদা। ব্রিধান ৩৮ এর চাল ও ঘ্রাণ বাসমতি (ডি) এর অনুরূপ। ভাত ও পোলাও
দুটোই খুব সুন্দর। এ ধানের চালে
সুগন্ধি আছে। রোপা
আমনের এ জাতটি আলোক সংবেদনশীল। অধিক উৎপাদন নিশ্চিত
করতে শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে বীজ বপন করা এবং প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দিতে হবে।
ব্রিধান ৩৯ :
রোপা
আমন মৌসুমের উপযোগী এ ধানের কান্ড মজবুত, তাই ঢলে পড়ে না। প্রচলিত
জাতের
চেয়ে এর ডিগপাতা একটু চওড়া এবং খাড়া। ব্রিধান ৩২ ও ব্রি ধান ৩৩ এর মতো এ জাতের বীজ বপন ও রোপণের
তারিখ নির্ধারণ করে পরবর্তী রবি ফসল করা যায়। তবে এ জাতের
ধান কোন ক্রমেই শ্রাবণ মাস শুরু হওয়ার আগে বপন করা উচিত নয়; কারণ জাতটি
ফুল ফোটার সময় উচ্চতাপ সহনশীল নয়।
ব্রি হাইব্রিড ধান ১ :
ব্রি
উদ্ভাবিত প্রথম হাইব্রিড ধানের জাতটি ব্রি ধান ২৯ এর চেয়ে প্রায় ১ টন বেশি ফলন দেয়। এটি যশোর ও
বরিশাল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। এর কান্ড ও
পাতা ঘন সবুজ ও খাড়া। কান্ড
শক্ত বলে গাছ হেলে পড়ে না। এ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি একটু আলাদা।
ব্রি ধান ৪০ :
এটি
একটি সংবেদনশীল ধান। এ
ধান চারা ও থোড় অবস্থায় ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের
উপকূলীয় অঞ্চলের যে জমিতে রাজাশাইল, কাজলশাইল, পাটনাই,
মরিচশাইল
ইত্যাদি স্থানীয় জাতের চাষাবাদ হচ্ছে ঐ সব জমিতে এ জাতের প্রতি
হেক্টরে ফলন ৪.০-৪.৫ টন। এ জাতের গাছ মজবুত। প্রচলিত জাতের মতো এর ডিগপাতা একটু
চওড়া, কিন্তু
গাছ উচ্চতায় অনেকটা ছোট। এ জাতের জীবনকাল কাজলশাইলের সমান এবং পাটনাই ও
মরিচশাইলের চেয়ে ৮-১৫ দিন আগাম। জাতটি আলোক সংবেদনশীল হওয়ায় প্রয়োজনে ৩০-৫০ দিনের
চারা এক হাঁটু পরিমাণ(২৫-৩০ সেন্টিমিটার) পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। চালের পেটে
কিঞ্চিত সাদাটে দাগ আছে। ধান সিদ্ধ করলে তা থাকে না। এর শীষের অগ্রভাগের
কোন কোন ধানে শুঙ থাকে।
ব্রি ধান ৪১ : এটি রোপা আমন মৌসুমের উপযোগী একটি আলোক সংবেদনশীল ধান। এ ধান চারা ও থোড় অবস্থায় ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের যে জমিতে রাজাশাইল, কাজলশাইল, পাটনাই, মরিচশাইল ইত্যাদি স্থানীয় জাতের চাষাবাদ হচ্ছে ঐ সব জমিতে এ জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন ৪.০-৪.৫ টন। এ জাতের গাছ মজবুত। প্রচলিত জাতের মতো এর ডিগপাতা একটু চওড়া, কিন্তু গাছ উচ্চতায় অনেকটা ছোট। এর জীবনকাল ব্রি ধান ৪০-এর চেয়ে এক সপ্তাহ নাবী। জাতটির চারা প্রয়োজনে ৩০-৫০ দিনের হলে এক হাঁটু পরিমাণ পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। ধানে কোন শুঙ নেই। আবার দেখতে বিআর ২৩ এর অনুরূপ, কিন' জীবনকাল ৮-১০ দিন আগাম।
ব্রি ধান ৪১ : এটি রোপা আমন মৌসুমের উপযোগী একটি আলোক সংবেদনশীল ধান। এ ধান চারা ও থোড় অবস্থায় ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের যে জমিতে রাজাশাইল, কাজলশাইল, পাটনাই, মরিচশাইল ইত্যাদি স্থানীয় জাতের চাষাবাদ হচ্ছে ঐ সব জমিতে এ জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন ৪.০-৪.৫ টন। এ জাতের গাছ মজবুত। প্রচলিত জাতের মতো এর ডিগপাতা একটু চওড়া, কিন্তু গাছ উচ্চতায় অনেকটা ছোট। এর জীবনকাল ব্রি ধান ৪০-এর চেয়ে এক সপ্তাহ নাবী। জাতটির চারা প্রয়োজনে ৩০-৫০ দিনের হলে এক হাঁটু পরিমাণ পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। ধানে কোন শুঙ নেই। আবার দেখতে বিআর ২৩ এর অনুরূপ, কিন' জীবনকাল ৮-১০ দিন আগাম।
ব্রি ধান ৪২ :
ফলন
প্রতি হেক্টর ৩.৫ টন। এটি
বোনা আউশের আগাম জাত এবং মোটামুটি ক্ষরা সহিষ্ণু। বোনা আউশ
মৌসুমে দেশের খরাপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা,
চুয়াডাঙ্গা
এবং বৃষ্টিবহুল উভয় এলাকায় চাষাবাদের জন্য জাতটি উপযোগী। এটি ছিটিয়ে,
লাইন
করে ও ডিবলিং পদ্ধতিতে বোনা যায়।
ব্রি ধান ৪৩ : ফলন প্রতি হেক্টর ৩.৫ টন। এর কান্ড শক্ত। তাই সহজে বাতাসে গাছ হেলে পড়ে না। শীষের উপরি ভাগের ২-৪ টা ধানের ছোট শুঙ দেখা যায়। জাতটি মোটামুটি খরা সহিষ্ণু এবং আগাম বোনা আউশ মৌসুমে দেশের খরাপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে ঝিনাইদহ,কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা এবং বৃষ্টিবহুল উভয় এলাকার জন্য জাতটি উপযোগী। এটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিং পদ্ধতিতে বপন করা যায়।
ব্রি ধান ৪৪ : এটি দেশের জোয়ার ভাটা অঞ্চলের একটি রোপা আমন ধানের জাত। এ ধান দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়। বিআর ১১-এর মতোই এ ধান স্বাভাবিক রোপা আমনে চাষ করা যায়, তবে অলবণাক্ত জোয়ার ভাটা এলাকায় যেখানে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি আসে সেখানে চাষের উপযোগী। জাতটি কিছুটা টুংরো রোগ প্রতিরোধী। স্থানীয় জাত মৌ লতার চেয়ে এর ফলন প্রায় দ্বিগুণ এবং জোয়ার ভাটা প্রবণ জমিতে বিআর ১১ ও ব্রিধান ৩১ এর চেয়ে ফলন প্রতি হেক্টরে ১ টন বেশি। জাতটি বিআর ১১ এর চাইতে ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হওয়া সত্বেও কান্ড শক্ত থাকায় সহজে হেলে পড়ে না। এর চাল মোটা হওয়ায় এটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের কাছে প্রিয়।
ব্রি ধান ৪৫ : এটি বোরো মৌসুমে আগাম জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। এর গাছ ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে অধিক মজবুত। ডিগপাতা লম্বা এবং খাড়া। এর জীবনকাল ব্রি ধান ২৮- এর সমান, কিন্তু ফলন বেশি।
ব্রি ধান ৪৩ : ফলন প্রতি হেক্টর ৩.৫ টন। এর কান্ড শক্ত। তাই সহজে বাতাসে গাছ হেলে পড়ে না। শীষের উপরি ভাগের ২-৪ টা ধানের ছোট শুঙ দেখা যায়। জাতটি মোটামুটি খরা সহিষ্ণু এবং আগাম বোনা আউশ মৌসুমে দেশের খরাপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে ঝিনাইদহ,কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা এবং বৃষ্টিবহুল উভয় এলাকার জন্য জাতটি উপযোগী। এটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিং পদ্ধতিতে বপন করা যায়।
ব্রি ধান ৪৪ : এটি দেশের জোয়ার ভাটা অঞ্চলের একটি রোপা আমন ধানের জাত। এ ধান দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়। বিআর ১১-এর মতোই এ ধান স্বাভাবিক রোপা আমনে চাষ করা যায়, তবে অলবণাক্ত জোয়ার ভাটা এলাকায় যেখানে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জোয়ারের পানি আসে সেখানে চাষের উপযোগী। জাতটি কিছুটা টুংরো রোগ প্রতিরোধী। স্থানীয় জাত মৌ লতার চেয়ে এর ফলন প্রায় দ্বিগুণ এবং জোয়ার ভাটা প্রবণ জমিতে বিআর ১১ ও ব্রিধান ৩১ এর চেয়ে ফলন প্রতি হেক্টরে ১ টন বেশি। জাতটি বিআর ১১ এর চাইতে ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হওয়া সত্বেও কান্ড শক্ত থাকায় সহজে হেলে পড়ে না। এর চাল মোটা হওয়ায় এটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের কাছে প্রিয়।
ব্রি ধান ৪৫ : এটি বোরো মৌসুমে আগাম জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। এর গাছ ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে অধিক মজবুত। ডিগপাতা লম্বা এবং খাড়া। এর জীবনকাল ব্রি ধান ২৮- এর সমান, কিন্তু ফলন বেশি।
ব্রি ধান ৪৬ : রোপা আমন মৌসুসের উপযোগী। এ জাতটি আলোক সংবেদনশীলতায় ঠিক
নাইজারশাইলের মতো। তাই
দেশের
বন্যা প্রবণ এলাকায় এর নাবীতে রোপণের উপযোগিতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলাফলে দেখা
গেছে, ১০-১৫
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৫-৩০ দিনের চারা রোপণ করলে প্রচলিত নাইজারশাইল এবং বিআর
২২-এর চেয়ে ব্রি ধান ৪৬ প্রতি হেক্টরে ১.০-১.৫ টন ফলন বেশি দেয়। কিন' জীবনকাল বিআর
২২-এর সমান। এ
জাতের গাছের আকৃতি ও ধান দেখতে বিআর ১১ এর মতো। জাতটি নাবীতে
রোপণ ছাড়াও প্রচলিত রোপা আমনের জাত হিসেবেও চাষাবাদ করা যায়।
ব্রি ধান ৪৭ : এ জাতটি সাতক্ষীরার লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করা হয়। জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং বাকি জীবনকালব্যাপী ৬ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। জাতটির ডিগপাতা ব্রি ধান ২৮- এর চেয়ে চওড়া, খাড়া এবং লম্বা। এর চালের পেটে সাদা দাগ আছে তবে ধান সিদ্ধ করলে ঐ সাদা দাগ থাকে না। এ জাতটি লবণাক্ত অঞ্চলের যেখানে সেচের পানির লবণাক্ততা মাত্রা ৪ ডিএস/মিটার পর্যন- আছে সেখানে অনায়াসেই বোরো মৌসুমে এর আবাদ করা যাবে।
ব্রি ধান ৪৭ : এ জাতটি সাতক্ষীরার লবণাক্ত এলাকায় বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করা হয়। জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং বাকি জীবনকালব্যাপী ৬ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। জাতটির ডিগপাতা ব্রি ধান ২৮- এর চেয়ে চওড়া, খাড়া এবং লম্বা। এর চালের পেটে সাদা দাগ আছে তবে ধান সিদ্ধ করলে ঐ সাদা দাগ থাকে না। এ জাতটি লবণাক্ত অঞ্চলের যেখানে সেচের পানির লবণাক্ততা মাত্রা ৪ ডিএস/মিটার পর্যন- আছে সেখানে অনায়াসেই বোরো মৌসুমে এর আবাদ করা যাবে।
ব্রি ধান ৪৮ : ধারে জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০৮ মৌসুম আউশ,
উচ্চতা
১০৫ সেমি, জীবনকাল
১১০ দিন,জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল মাঝারি মোটা, ভাত ঝরঝরে, ধানের গড় ফলন ৫.৫ টন/হেক্টর।
ব্রি ধান ৪৯ : ধারে জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০৮ মৌসুম আমন,
উচ্চতা
১০০ সেমি, জীবনকাল
১৩৫ দিন,জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল মাঝারি চিকন,নাইজারশাইলের মতো এবং বিআর ১১ থেকে ৭ দিন আগাম, ভাত ঝরঝরে,
ধানের
গড় ফলন
৫.৫ টন/হেক্টর।
ব্রি ধান ৫০ : ধারে জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০৮(বাংলামতি)
মৌসুম
বোরো, উচ্চতা
৮২ সেমি, জীবনকাল
১৫৫ দিন, জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল লম্ব,চিকন, সুগন্ধি ও সাদা, ধানের গড় ফলন ৬.০ টন/হেক্টর।
ব্রি হাইব্রিড ধান ১ : ধারে জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০১ মৌসুম বোরো,
উচ্চতা
১১০ সেমি, জীবনকাল
১১৫ দিন, জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল মাঝারি চিকন, স্বাচ্ছ ও সাদা, ধানের গড় ফলন ৮.৫ টন/হেক্টর।
ব্রি হাইব্রিড ধান ২ : ধারে জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০৮ মৌসুম বোরো,
উচ্চতা
১০৫ সেমি, জীবনকাল
১৪৫ দিন, জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল মাঝারি মোটা এবং আগাম, ধানের গড় ফলন ৮.০ টন/হেক্টর।
ব্রি হাইব্রিড ধান ৩ : ধারে
জাত ও অবমুক্তির বছর ২০০৯ মৌসুম বোরো, উচ্চতা ১১০ সেমি, জীবনকাল ১৪৫
দিন, জাতের
বৈশিষ্ট্য চাল মাঝারি মোটা এবং আগাম, ধানের গড় ফলন ৯.০ টন/হেক্টর।
ধানের পোকামাকড়
বাংলাদেশে
মোট ফসলী জমির প্রায় ৭৬% জমিতে ধান চাষ করা হয়।এর প্রায় ৭০% জমিতেই আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছ। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০
লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব
জাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এসব আধুনিক জাতের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি সার ও সেচ দিতে হয়। এজন্য পোকামাকড়ের
আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৫ সালে এ দেশে ধান
ফসলের জন্য ক্ষতিকর ১৭৫ প্রজাতির পোকাকে শক্ত করা হয় (করিম ১৯৮৫)। পরবর্তীতে২০০৩ সালে
২৬৬টি প্রজাতির পোকাকে ধানের ক্ষতিকর পোকা হিসেবে শনাক্ত করা হয় (ইসলাম ও অন্যান্য ২০০৩)।এর মধ্যে সব পোকা সব মৌসুমে বা সব জায়গার ধান ফসলে ক্ষতি
করে না। ২০ প্রজাতির পোকাকে ধান
ফসলের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে মাজরা, পামরি, বাদামী গাছ ফড়িং ধানের
প্রধান তিনটি ক্ষতিকর পোকা।
সূচিপত্র
১.
ধানের পোকামাকড়
১.১
মাজরা পোকা
১.২
নলি মাছি
১.৩
পাতা মাছি
১.৪
পামরী পোকা
১.৫
চুংগী পোকা
১.৬
পাতা মোড়ানো পোকা
১.৭
লেদা পোকা
১.৮
লম্বাশুঁড় উড়চুঙ্গা
১.৯
ঘাস ফড়িং
১.১০
সবুজ শুঁড় লেদা পোকা
১.১১
ঘোড়া পোকা
১.১২
সবুজ পাতা ফড়িং
১.১৩
আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
১.১৪
থ্রিপস
১.১৫
বাদামী গাছ ফড়িং
১.১৬
সাদা পিঠ গাছ ফড়িং
১.১৭
ছাতরা পোকা
১.১৮
গান্ধি পোকা
১.১৯
শীষকাটা লেদা পোকা
১.২০ উরচুংগা
১.২১
গুদামজাত শস্যের পোকা
১.২১.১ কেড়ি পোকা
১.২১.২ লেসার গ্রেইন বোরার
১.২১.৩ অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ
১.২১.৪ রেড ফ্লাওয়ার বিট্
তিন ধরনের মাজরা পোকা বাংলাদেশের ধান ফসলের ক্ষতি করে। যেমন- হলুদ মাজরা। কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা । মাজরা পোকার কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। গাছে শীষ আসার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। থোড় আসার আগে মরা ডিগ দেখা দিলে বাড়তি কিছু কুশী উৎপাদন করে গাছ আংশিকভাবে ক্ষতি পূরণ করতে পারে।
ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়।
শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে স¤পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড-এর মত দেখা যেতে পারে। কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ স¤পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।
মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে। গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।
মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে রেরুবার পর আস্তে আস্তে কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।
আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মথ ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে মাজরা পোকার সংখ্যা ও ক্ষতি অনেক কমে যায়। থোর আসার পূর্ব পর্যন্ত হাতজাল দিয়ে মথ ধরে ধ্বংস করা যায়।
# ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির বসার সুযোগ করে দিলে এরা পূর্ণবয়¯ক মথ খেয়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে।
# মাজরা পোকার পূর্ণ বয়¯ক মথের প্রাদুর্ভাব যখন বেড়ে যায় তখন ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়।
# যে সব অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশী, সে সব এলাকায় সম্ভব হলে চান্দিনার (বি আর ১) মত হলুদ মাজরা পোকা প্রতিরোধ স¤পন্ন জাতের ধান চাষ করে আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
# ধানের জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ৫ ভাগ মরা শীষ পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক (যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, কার্বোফুরান ৫জি, ফেনিট্রথিয়ন ৫০ ইসি ইত্যাদি) ব্যবহার করা।
গলমাছি বা নলিমাছি
এ পোকার আক্রামণের ফলে ধান গাছের মাঝখানের পাতাটা পিঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে ‘পিঁয়াজ পাতা গল’ বা ‘নল’ বলা হয়ে থাকে। এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ¦ল সাদা বলে একে ‘সিলভার শুট’ বা ‘রূপালী পাতা’ বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে সনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছে আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচ থোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারেনা।
গাছের মাঝখানের পাতাটা গল বা পিঁয়াজ পাতার মত হয়ে যায়। তারই গোড়ায় বসে গলমাছির কীড়াগুলো খায়। কীড়াগুলো এই গলের মধ্যেই পুত্তলীতে পরিণত হয় এবং এই গলের একেবারে ওপরে ছিদ্র করে পুত্তলী থেকে পূর্ণ বয়¯ক গলমাছি বেরিয়ে আসে। শুধু পুত্তলীর কোষটা সেখানে লেগে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জল লাল রঙের হয়। এরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না। স্ত্রী গলমাছি সাধারণতঃ পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের উপরও ডিম পাড়ে।
গলমাছির বাৎসরিক বংশবৃদ্ধি মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শু®ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলী অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে। ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র স¤পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে। ধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র স¤পূর্ণ করতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপণ করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকলে শু®ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¤ক গলমাছি ধরে ধ্বংস করা।
# শতকরা ৫ ভাগ পিঁয়াজ পাতার মতো হয়ে গেলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
পাতামাছি
পাতা মাছির কীড়া ধান গাছের মাঝখানের পাতা থেকে পুরোপুরি বের হওয়ার আগেই পাতার পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে, ফলে ঐ অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মাঝখানের পাতা যত বাড়তে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ততই স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাতামাছির এই ধরনের ক্ষতির ফলে কুশী কম হয় এবং ধান পাকতে বাড়তি সময় লাগতে পারে। চারা থেকে শুরু করে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত ধান গাছ এই পোকা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যে সমস্ত ক্ষেতে প্রায় সব সময়ই দাঁড়ানো পানি থাকে সে সব ক্ষেতেই এই পোকা বেশী আক্রমণ করে।
পূর্ণ বয়¯ক পাতা মাছি ২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এরা পাতার উপরে একটা করে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটার পর কীড়াগুলো কান্ডের মাঝখানে ঢুকে কান্ডের ভেতরে অবস্থিত কচি মাঝ পাতার পাশ থেকে খেতে শুরু করে। কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে কচি পাতার রঙের মতোই সবুজ মিশ্রিত হলদে রঙের হয়ে থাকে। এরা গাছের বাইরের পাতার খোলে এসে পুত্তলীতে পরিণত হয়। পাতামাছির জীবনচক্র ৪ সপ্তাহে পূর্ণ হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আক্রান্ত জমি থেকে দাঁড়ানো পানি সরিয়ে দেয়া।
# শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
পামরী পোকা
পূর্ণবয়¯ক পামরী পোকার গায়ের রং কালো এবং পিঠে কাঁটা আছে। পূর্ণবয়¯ক ও তাদের কীড়াগুলো উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে। পূর্ণবয়¯ক পামরী পোকা পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্র¯ত পাতার ওপর লম্বালম্বি কয়েকটি সমান্তরাল দাগ দেখতে পাওয়া যায়। বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের পাতাগুলো শুকিয়ে পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়। এরা পাতার উপরের সবুজ অংশ এমন ভাবে খায় যে শুধু নীচের পর্দাটা বাকী থাকে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতে অনেক পূর্ণ বয়¯ক পামরী পোকা দেখা যেতে পারে। পূর্ণ বয়¯ক পোকাগুলো পূর্ববর্তী ধান ফসল থেকে নতুন ক্ষেত আক্রমণ করে। সাধারণতঃ বাড়ন্ত গাছ আক্রান্ত বেশী হয় এবং ধান পাকার সময় পোকা থাকে না। স্ত্রী পামরী পোকা পাতার নীচের দিকে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার দুই পর্দার মধ্যে সুড়ঙ্গ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অনেকগুলো কীড়া এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়। কীড়া এবং পুত্তলীগুলো সুড়ঙ্গের মধ্যেই থাকে। পামরী পোকা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে জীবন চক্র স¤পূর্ণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# হাতজাল বা গামছা দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলুন ।
# গাছে কুশী ছাড়ার শেষ সময় পর্যন্ত পাতার গোড়ার ২-৩ সেমি (প্রায় ১ ইঞ্চি) উপর থেকে ছেটে দিয়ে শতকরা ৭৫-৯২টা পামরী পোকার কীড়া মেরে ফেলা যায় এবং পরবর্তী আক্রমণ রোধ করা যায়।
# শতকরা ৩৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অথবা প্রতি গোছা ধান গাছে ৪টি পূর্ণবয়¯ক পোকা থাকলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
চুংগী পোকা
ধানগাছের কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা আসার আগে কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ লম্বালম্বি ভাবে এমন করে কুরে কুরে খায় যে শুধু মাত্র উপরের পর্দাটা বাকী থাকে। আক্রান্ত— ক্ষেতের গাছের পাতা সাদা দেখা যায়। চারা অবস্থায় এ পোকা বেশী ক্ষতি করে।
পূর্ণবয়স্ক চুংগীপোকা ৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ছড়ানো অবস্থায় পাখা ১৫ মিমি চওড়া হয়। চুংগীপোকা রাতের বেলায় তৎপর এবং আলোতে আকর্ষিত হয়। গাছের নীচের দিকের পাতার পিছন পিঠে এরা ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো বড় চারাগাছ এবং নুতন রোয়া ক্ষেতে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা পাতার উপরের দিকটা কেটে চুংগী তৈরী করে এবং এর মধ্যে থাকে। কাটা পাতা দিয়ে তৈরী চুংগীগুলো বাতাসে বা পানিতে ভেসে ক্ষেতের এক পাশে জমা হয় এবং দেখলে মনে হয় যেন কাঁচি দিয়ে পাতাগুলো কুচি করে কেউ কেটে ফেলেছে। চুংগী পোকা প্রায় ৩৫ দিনে এক বার জীবনচক্র স¤পূর্ণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# চুংগী পোকার কীড়া পানি ছাড়া শুকনো জমিতে বাঁচতে পারে না। তাই আক্রান্ত ক্ষেতের পানি সরিয়ে দিয়ে সম্ভব হলে কয়েকদিন জমি শুকনো রাখতে পারলে এ পোকার সংখ্যা কমানো এবং ক্ষতি রোধ করা যায়।
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
# চুংগীকৃত পাতা জমি থেকে সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
# শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা ।
পাতা মোড়ানো পোকা
এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে পাওযার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ পাতার কিনার দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রেখা রোগ শুরু হতে পারে।
পূর্ণবয়স্ক ¯ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
# জমিতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ দমন করা।
# শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
লেদা পোকা
লেদা পোকা কেটে কেটে খায় বলে ইংরেজীতে এদের কাটওয়ার্ম বলে। এই প্রজাতির পোকারা সাধারণতঃ শুকনো ক্ষেতের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কারণ এদের জীবন চক্র শেষ করার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। পার্শ্ববর্তী ঘাসের জমি থেকে লেদা পোকার কীড়া নীচু, ভিজা জমির ধানক্ষেত আক্রমণ করে। প্রথমাবস্থায় কীড়াগুলো শুধু পাতাই খায়, কিন্তু বয়¯ক কীড়া স¤পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলতে পারে। এরা চারা গাছের গোড়াও কাটে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফেলুন।
# ধান কাটার পর ক্ষেতের নাড়া পুডিয়ে দিলে বা জমি চাষ করে এ পোকার সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
# আক্রান্ত— ক্ষেত সেচ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে এবং পাখির খাওয়ার জন্য ক্ষেতে ডালাপালা পুঁতে দিয়েও এদের সংখ্যা কমানো যায়।
# শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
লম্বাশুঁড় উরচুংগা
এ পোকার পূর্ণবয়¯ক ও বাচ্চাগুলো ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা ও শিরাগুলো শুধু বাকি থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত পাতাগুলো জানালার মত ঝাঝরা হয়ে যায়।
ঘাসফড়িং
পূর্ণ বয়স্ক ঘাসফড়িং ও বাচ্চা উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। এরা ধানের পাতার পাশ থেকে শিরা পর্যন্ত খায়। ঘাসফড়িং এর বিভিন্ন প্রজাতি এক সাথে অনেক সংখ্যায় ক্ষেত আক্রমণ করে। তাদেরকে ইংরেজীতে লোকাষ্ট এবং বাংলায় পংগপাল বলা হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা।
# ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির সাহায্য নেয়া।
# শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
সবুজ-শুঁড় লেদা পোকা
পূর্ণবয়স্ক মথ পাতার ওপর ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো সবুজ রঙের এবং মাথার উপর এবং লেজের দিকে শিং এর মতো এক জোড়া করে শুড় আছে। শুধুমাত্র কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেয়ে ক্ষতি করে থাকে।
ঘোড়া পোকা সবুজ সেমিলুপার
এ পোকার কীড়াগুলোও সবুজ-শুঁড় লেদা পোকার মত বড় কিন্তু মাথা বা লেজে শিং নেই। কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খায়। এরা চারা অবস্থা থেকে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত বেশী ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলো পিঠ কুচকে চলে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফলা।
# শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।
¯কীপার পোকা
এ পোকার কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেতে খেতে মধ্য শিরার দিকে আসে (ছবি ৩৩)। সবুজ-শুড় লেদা পোকা, সেমিলুপার এবং এ পোকার খাওয়ার ধরন ও ক্ষতির নমুনা একই রকম।
পূর্ণবয়¯ক ¯কীপার একটি মথ। এর শুঁড় দুটো দেখতে অনেকটা আংটার মত (ছবি ৩৫)। এরা বেশ তাড়াতাড়ি আঁকা-বাঁকা ভাবে ওড়ে। এ পোকার পুত্তলী মোড়ানো পাতার সাথে রেশমী সুতার মত আঠা দিয়ে আটকানো থাকে (ছবি ৩৪)।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
# শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।
সবুজ পাতা ফড়িং
সবুজ পাতা ফড়িং ধান উৎপাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা ধান গাছের পাতা থেকে রস শুষে খায়। এরা বেটে ধান, ক্ষণস্থায়ী হলদে রোগ, টুংরো এবং হলুদ বেটে নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাধারণতঃ টুংরো রোগ বেশি ছড়ায়। পূর্ণবয়স্ক সবুজ পাতা ফড়িং ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা এবং গায়ে উজ্জ¦ল সবুজ রঙের সাথে বিভিন্ন কাল দাগ থাকে। এরা পাতার মধ্য শিরায় বা পাতার খোলে ডিম পাড়ে। এদের বাচ্চাগুলো পাঁচ বার খোলস বদলায় এবং এদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ আছে ।
আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
এরা বেটে গল, টুংরো এবং কমলা পাতা নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায় এবং পাতার রস শুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িং-এর পাখায় আঁকাবাঁকা দাগ আছে। বাচ্চাগুলো হলদে ধূসর রঙের।
দমন ব্যবস্থাপনা
# ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদে সবুজ পাতাফড়িং এবং আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
# হাতজাল দ্বারা পোকা ধরে মেরে ফেলা।
# সবুজ পাতা ফড়িং ও টুংরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন ধানের জাতের চাষ করা।
# হাতজালের প্রতি টানে যদি একটি সবুজ পাতাফড়িং পাওয়া যায় এবং আশেপাশে টুংরো রোগাক্রান্ত গাছ থাকে তাহলে বীজতলা ও ধানের জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
থ্রিপ্স
বাংলাদেশে ছয়টি প্রজাতির থ্রিপ্স পোকা ধান গাছ আক্রমণ করে। পূর্ণবয়¯ক থ্রিপ্স পোকা এবং তাদের বাচ্চারা পাতার উপরে ক্ষত সৃষ্টি করে পাতার রস শুষে খায়। ফলে পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়ে যায়। পাতায় খাওয়ার জায়গাটা হলদে থেকে লাল দেখা যায়। থ্রিপ্স পোকা ধানের চারা অবস্থায় এবং কুশী ছাড়া অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে। যে সমস্ত জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি থাকে না, সাধারণতঃ সে সব ক্ষেতে থ্রিপ্স-এর আক্রমণ বেশী হয়।
পূর্ণবয়¯ক থ্রিপ্স পোকা খুবই ছোট, ১-২ মিলিমিটার লম্বা এবং এদের শুড়ে ৫-৮টা ভাগ আছে। এরা পাখা বিশিষ্ট বা পাখা বিহীন হতে পারে। পাখা বিশিষ্ট পোকার পাখাগুলো সরু, পিঠের উপর লম্বালম্বিভাবে বিছানো থাকে এবং পাখার পাশে কাঁটা আছে। ডিম পাড়ার জন্য ¯এী পোকার পেছনে করাতের মত ধারালো একটা অংগ আছে যা দিয়ে এরা পাতার মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে দিতে পারে। ডিমগুলো সব একই আকারের, খুবই ছোট, এক মিলিমিটারের চার ভাগের এক ভাগ লম্বা এবং দশ ভাগের এক ভাগ চওড়া। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলোর রং স্বচ্ছ থাকে এবং ডিম ফোটার আগে আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায়। ডিম থেকে সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ এবং পরে হলদে রং ধারণ করে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ নিশ্চল থাকে, পরে মাঝখানের কচি পাতা, পাতার খোল এবং নতুন বের হওয়া ধানের শীষ খাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণ বয়¯ক পোকায় পরিণত হওয়ার পরও তাদের জীবনকাল সেখানেই কাটায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# নাইট্রোজেন জাতীয় সার, যেমন ইউরিয়া কিছু পরিমাণ উপরি প্রয়োগ করে এই পোকার ক্ষতি কিছুটা রোধ করা যায়।
# থ্রিপ্স পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত জমির শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাদামী গাছফড়িং
যে সমস্ত ধানের জাতে বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই সে সব জাতের ধানে এরা খুব তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে, ফলে এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মত হপারবার্ণ - এর সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছগুলো প্রথমে হলদে এবং পরে শুকিয়ে মারা যায়। বাদামী গাছফড়িং গ্রাসিস্টান্ট, র্যাগেটস্টান্ট ও উইল্টেডস্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এ সমস্ত রোগ দেখা যায়নি। লম্বা পাখাবিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামী ফড়িংগুলো প্রথমে ধান ক্ষেত আক্রান্ত করে। এরা পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর ওপর পাতলা চওড়া একটা আবরণ থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা (নিমফ) বের হতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলায় এবং পূর্ণবয়¤ক ফড়িং এ পরিণত হতে ১৩-১৫ দিন সময় নেয়। প্রথম পর্যায়ের (ইন¯টার) বাচ্চাগুলোর রং সাদা এবং পরের পর্যায়ের বাচ্চাগুলো বাদামী। বাচ্চা থেকে পূর্ণবয়¯ক বাদামী গাছফড়িং ছোট পাখা এবং লম্বা পাখা বিশিষ্ট হতে পারে। ধানে শীষ আসার সময় ছোট পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাই বেশী থাকে এবং স্ত্রী পোকাগুলো সাধারণত: গাছের গোড়ার দিকে বেশি থাকে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে, যারা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# যে সব এলাকায় সব সময় বাদামী গাছফড়িং এর উপদ্রব হয় সে সব এলাকায় তাড়াতাড়ি পাকে (যেমন চান্দিনা) এমন জাতের ধান চাষ করা।
# ধানের চারা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগানো।
# জমিতে পোকা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা।
# উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ পরিহার করা ।
# বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত ব্রি ধান-৩৫ চাষ করা।
# ক্ষেতে শতকরা ৫০ ভাগ গাছে অন্ততঃ একটি মাকড়সা থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ না করা।
# শতকরা ৫০ ভাগ ধান গাছে ২-৪টি ডিমওয়ালা স্ত্রী পোকা অথবা ১০টি বাচ্চা পোকা প্রতি গোছায় পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
সাদা পিঠ গাছ ফড়িং
অধিকাংশ সময় বাদামী গাছ ফড়িং এর সাথে এদের দেখতে পাওয়া যায় এবং সেজন্যে এ দু’জাতের পোকাকে সনাক্ত করতে ভুল হয়। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং-এর বাচ্চাগুলো (নিমফ্) সাদা থেকে বাদামী কালো ও সাদা মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণবয়¯ক ফড়িংগুলো ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং তাদের পিঠের ওপর একটা সাদা লম্বা দাগ আছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ফড়িংগুলোই শুধু ছোট পাখা বিশিষ্ট। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং কোন ভাইরাস রোগ ছড়ায় না কিন্তু গাছের রস শুষে খেয়ে হপারবার্ণ সৃষ্টি করে। এতে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত হতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা
এ পোকা দমনের জন্য বাদামী গাছ ফড়িংয়ের জন্য উল্লেখিত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে এবং
# সাদাপিঠ গাছ ফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত যেমন বিআর ৬, ১৪, ২৩, ২৬ ও ব্রি ধান ২৭, ৩৩ চাষ করা যেতে পারে।
ছাতরা পোকা
শুকনো আবহাওয়ায় বা খরার সময়ে এবং যে সমস্ত জমিতে বৃষ্টির পানি মোটেই দাঁড়াতে পারে না সে ধরনের অবস্থায় ছাতরা পোকার আক্রমণ বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের রস শুষে খাওয়ার ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। আক্রমণ বেশী হলে ধানের শীষ বের হয় না। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছগুলো জায়গায় জায়গায় বসে গেছে বলে মনে হয়।
স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, লালচে সাদা রঙের, নরম দেহবিশিষ্ট, পাখাহীন এবং গায়ে সাদা মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। এরাই গাছের ক্ষতি করে। এক সাথে অনেকগুলো ছাতরা পোকা গাছের কান্ড ও খোল এবং পাতার খোলের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকে। পুরুষ পোকা ¯এী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম বলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। এদের দু’টো পাখা আছে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# আক্রমণের প্রথম দিকে সনাক্ত করতে পারলে আক্রান্ত গাছগুলো উপরে নষ্ট করে ফেলে এ পোকার আক্রমণ ও ক্ষতি ফলপ্রসূভাবে কমানো যায়।
# শুধুমাত্র আক্রান্ত জায়গায় ভাল করে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করলে দমন খরচ কম হয়।
গান্ধি পোকা
গান্ধি পোকা ধানের দানা আক্রমণ করে। পূর্ণবয়স্ক এবং বাচ্চা পোকা (নিম্ফ্) উভয়েই ধানের ক্ষতি করে। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন ক্ষতি করলে ধান চিটা হয়ে যায়। এরপরে আক্রমণ করলে ধানের মান খারাপ হয়ে যায় এবং চাল ভেঙ্গে যায়। পূর্ণবয়¤ক গান্ধি পোকা ধূসর রঙের এবং কিছুটা সরু। পাগুলো ও শুঁড়দুটো লম্বা। এরা ধানের পাতা ও শীষের ওপর সারি করে ডিম পাড়ে। সবুজ রঙের বাচ্চা এবং পূর্ণ বয়¤ক গান্ধি পোকার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# এ পোকার সংখ্যা যখন খুব বেড়ে যায় তখন ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
# ধানের প্রতি গোছায় ২-৩টি গান্ধি পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন। কীটনাশক বিকাল বেলায় প্রয়োগ করতে হবে।
শীষকাটা লেদাপোকা
এ ধরনের পোকার স্বভাব অনুযায়ী এরা একসংগে বহু সংখ্যায় থাকে বলে ইংরেজীতে এদের আর্মি ওয়ার্ম বলে। এরা এক ক্ষেত খেয়ে আর এক ক্ষেত আক্রমণ করে। লেদা পোকা বিভিন্ন জাতের ঘাস খায়। শুধু কীড়াগুলো ক্ষতি করতে পারে (ছবি ৫৫)। কীড়াগুলো প্রাথমিক অবস্থায় পাতার পাশ থেকে কেটে খায়। কীড়াগুলো বড় হলে আধা পাকা বা পাকা ধানের শীষের গোড়া থেকে কেটে দেয় এবং এজন্য এর নাম শীষকাটা লেদা পোকা। বোনা ও রোপা আমনের এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পোকা।
দমন ব্যবস্থাপনা
# ধান কাটার পর এ পোকার কীড়া ও পুত্তলী ক্ষেতের নাড়া বা মাটির ফাটলের মধ্যে থাকে। তাই ধান কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে দিয়ে বা ঐ ক্ষেত চাষ করে ফেললে পুত্তলী ও কীড়া মারা যায় এবং পরবর্তী মৌসুমে এ পোকার সংখ্যা সামগ্রিকভাবে কমানো যায়।
# বাঁশ দিয়ে পরিপক্ক ধান হেলিয়ে বা শুইয়ে দিলে আক্রমণ কমে যায়।
# ক্ষেতের চারপাশে নালা করে সেখানে কেরোসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে রাখলে কীড়া আক্রান্ত ক্ষেত থেকে আসতে পারে না।
# এ ছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে একটু বেশী করে সেচ এবং পাখির খাওয়ার সুবিধের জন্য ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ডালপালা পুঁতে দিয়ে এ পোকার সংখ্যা কমানো যায়।
# ধানের ক্ষেতে প্রতি ১০ বর্গমিটারে ২-৫টি কীড়া পাওয়া গেলে কীটনাশক ব্যবহার করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে পাকা ধানে যেন কীটনাশক প্রয়োগ করা না হয়।
উরচুংগা
উরচুংগা গাছের গোড়া কেটে দেয়, ফলে গাছ মারা যায়। অনেক সময় এদের ক্ষতি মাজরা পোকার ক্ষতির সাথে ভুল হতে পারে। উরচুংগা গাছের নতুন শিকড় এবং মাটির নীচে গাছের গোড়া খেয়ে ফেলে। কিন্তু মাজরা পোকা কান্ডের ভেতরটা খায়। পানি আটকে রাখা যায় না এমন ধান ক্ষেতে উরচুংগা একটা সমস্যা। এ পোকা তখনই আক্রমণ করে যখন ক্ষেতে আর পানি থাকে না, অথবা স্থানে স্থানে যখন পানি কম বেশী হয় এবং মাটি দেখা যায়। ক্ষেত পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিলে উরচুংগা আইলে বা উঁচু জায়গায় চলে যায়। সেখানে মাটির নীচে শক্ত স্থানে ডিম পাড়ে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# সেচ দিয়ে ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
# চালের গুড়া ও কীটনাশকের সংমিশ্রণে তৈরি বিষটোপ ধানের জমিতে বা আইলে ছিটিয়ে দিয়ে উরচুংগা দমন করা যেতে পারে।
# বিষটোপের পরিবর্তে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
গুদামজাত শস্যের পোকা
গুদামজাত বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও বীজ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে খাদ্য শস্যের ওজন কমে যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং পুষ্টিমান হ্রাস পায়। এ ছাড়া খাদ্য দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয় এবং বাজারমূল্য হ্রাস পায়। প্রায় ৬০ টিরও বেশী পোকা গুদামজাত শস্যে ক্ষতি করে থাকে। কয়েকটি প্রধান অনিষ্টকারী পোকার বিবরণ দেয়া হলো।
কেড়ি পোকা
পূর্ণবয়¯ক ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার সামনের দিকে লম্বা শুঁড় আছে। এই পোকা শস্যদানাতে শুঁড়ের সাহায্যে গর্ত করে ভিতরের শাঁস খায়।
লেসার গ্রেইন বোরার
কীড়া ও পরিণত পোকা উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে (ছবি ৫৮)। আকারে ছোট, মাথা গোল ও গ্রীবা নিচের দিকে নোয়ানো, তাই উপর থেকে দেখলে চোখে পড়ে না। এ পোকার খুব পেটুক প্রকৃতির এবং শস্যদানার ভিতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খেয়ে গুঁড়ো করে ফেলে।
অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ
শুধুমাত্র কীড়া ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়¯ক পোকা ছোট, হালকা খয়েরী রংয়ের এবং সামনের পাখার কয়েকটি দাগ দেখা যায় (ছবি ৫৯)। পিছনের পাখার শীর্ষপ্রান্ত বেশ চোখা। শস্যদানার ভিতর ছিদ্র করে ঢুকে শাঁস (বহফড়ংঢ়বৎস) খেতে থাকে এবং পুত্তলী পর্যন্ত সেখানে থাকে।
রেড ফœাওয়ার বিট্ল
পরিণত পোকা ও কীড়া উভয়ই ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়¯ক পোকা আকারে খুবই ছোট এবং লালচে বাদামী রঙের। এ পোকা দানাশস্যের গুঁড়া (আটা, ময়দা, সুজি) এবং ভ্রুণ খেতে বেশী পছন্দ করে। আক্রান্ত খাদ্যসামগ্রী দুর্গন্ধযুক্ত ও খারাপ স্বাদের হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
# গুদাম ঘর বা শস্য সংরক্ষণের পাত্র পরি¯কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ফাটল থাকলে তা মেরামত করা। গুদামঘর বায়ূরোধী, ইঁদুরমুক্ত এবং মেঝে আর্দ্রতা প্রতিরোধী হতে হবে। নতুন ও পুরোনো খাদ্যশস্য একত্রে রাখা বা মিশানো যাবে না।
# খাদ্য মজুদের ২-৪ সপ্তাহ পূর্বে গুদাম পরি¯কারের পর অনুমোদিত কীটনাশকের দ্বারা গুদামের মেঝে, দেয়াল, দরজা, উপরের সিলিং প্রভৃতিতে স্প্রে করা যেতে পারে।
# কিছু দেশীয় গাছ গাছড়া যেমন- নিম, নিশিন্দা ও বিষকাটালীর পাতা শুকিয়ে গুড়া করে খাদ্য শস্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়।
# কিছুদিন বিরতি দিয়ে গুদামজাত খাদ্য শস্য রৌদ্রে শুকিয়ে পোকা মাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়।
# গুদামজাত শস্যে পোকার আক্রমণ তীব্র হলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা ফসটকসিন (৪-৫ টি ট্যাবলেট/টন খাদ্যশস্য) ব্যবহার করে গুদামঘর স¤পূর্ণরূপে ৩-৪ দিন বন্ধ রাখতে হবে। বিষবা®প মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বিষ বড়ি ব্যবহারের পূর্বে প্রয়োজনীয় সতর্কতা প্রয়োজন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে ব্যবহার করানো উচিত নয়।
ধানের আগাছা দমন
সব ধরনের ধানের জমিতেই আগাছা জন্মে। আগাছা সময়মত পরিষ্কার না করলে তা ধানের সাথে খাদ্য ও জায়গা নিয়েপ্রতিযোগিতা করে। আগাছা ধান ফসলের সাথে আলো, পানি ও পুষ্টি নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। ফলে ধানের গাছ ভালোভাবে বাড়তে পারেনা এবং তাতে ফলন কমে যায়। এজন্য ধানক্ষেতের আগাছা চেনা ও সেগুলো দমন করা দরকার।
ধান ক্ষেতের আগাছা পরিচিতি
(Identification of rice weeds)
হলদে মুথা
বৈজ্ঞানিক নাম Cyperus difformis L.
হলদে মুথা একটি ২০-৭০ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ, ঘন গুচ্ছযুক্ত এবং একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। কান্ড মসৃণ, উপরের দিকে ত্রিকোণাকার এবং ১-৪ মিলিমিটার পুরু। পাতার খোল নলের মত এবং গোড়ার দিকে যুক্ত থাকে। নিচের দিকের খোলগুলো খড় থেকে বাদামী রঙের হয়। গোড়ার দিকে ৩-৪টি ঢলঢলে এবং সারি সারি পাতা ১০-৪০ সেমি লমবা ও ২-৩ মিলিমিটার চওড়া হয়ে থাকে।
পুষপবিন্যাস ঘন, গোলাকার সরল বা যৌগিক আমেবল জাতীয় (ছাতাকৃতি) যা ৫-১৫ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। তার সংগে ২-৪টি, সচরাচর ৩টি ১৫-৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৬ মিলিমিটার চওড়া পাতার মত বৃতি বিপরীত দিকে অবস্থান করে। পুষপবিন্যাসের প্রাথমিক পুষপপ্রান-গুলো ১ সেন্টিমিটার লমবা। কতকগুলো বোঁটা ছাড়া এবং কতকগুলোর লমবা বোঁটা আছে। পুষপপ্রান্তগুলো গুচ্ছভূত ও ৬ মিমি ব্যাসযুক্ত ডিমবাকৃতি বা গোলাকার। গুচ্ছগুলো ১০-৩০টি ফুল সমবলিত ২-৫ মিলিমিটার লমবা ও ১.০-১.৫ মিলিমিটার চওড়া সবুজ রঙের রৈখিক বা চক্র কীলক মঞ্জরী দ্বারা গঠিত। ফল ০.৬ মিমি লম্বা ও কিছুটা চ্যাপ্টা বৃত্তাকার থেকে ডিমবাকৃতি বাদামী রঙের ‘একিন’। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
বড়চুঁচা
বৈজ্ঞানিক নাম- Cyperus iria L.
বড়চুঁচা মসৃণ, গুচ্ছযুক্ত ত্রিকোণাকৃতির কান্ড বিশিষ্ট, ২০-৬০ সেমি লমবা একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। শিকড়গুলো হলদে লাল এবং আঁশযুক্ত। পাতার খোল পাতলা এবং কান্ডের গোড়ার দিকে আবৃত রাখে। পাতার ফলক সোজা তলোয়ারের মত, পুষপ কান্ড থেকে খাটো এবং প্রায় ৫ মিলিমিটার চওড়া।
পুষপবিন্যাসটি যৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি)। প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পুষপপ্রান-গুলো যথাক্রমে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার ও ২ সেন্টিমিটার লমবা। বিপরীতভাবে অবস্থানরত ৩-৫টি, কখনো কখনো ৭টি মঞ্জুরীপত্র সংযুক্ত থাকে (ছবি ৯৭)। সবচেয়ে নিচের মঞ্জরীপত্রটি পুষপবিন্যাস অপেক্ষা লমবা। ২-৩ সেন্টিমিটার লমবা শস্য মঞ্জরীর (স্পাইক) শাখার অগ্রভাগ লমবা ও ছড়ানো। হলদে বাদামী থেকে সবুজ রঙের অসংখ্য কীলক মঞ্জরী (স্পাইকলেট) খাড়াভাবে ছড়ানো। দৈর্ঘ্য ৩-১০ মিলিমিটার এবং ১.৫-২.০ মিলিমিটার ।
হলদে বাদামী রঙের ফল একিন জাতীয়, ডিমবাকৃতি ত্রিকোণাকার এবং ১.০-১.৫ মিলিমিটার লম্বা । বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
ভাদাইল বা মুথা
বৈজ্ঞানিক নাম Cyperus rotundus L
এটি একটি খাড়া, মূল ভূগর্ভস' কান্ড (রাইজোম), কান্ডে (টিউবার) রূপান্তরিত এবং ২০ সেমি উঁচু বহুবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ)। গোড়ার স্ফীত কন্দসহ কান্ডগুলো খাড়া, শাখাবিহীন, মসৃণ ও ত্রিকোণাকৃতি। মূল শায়িত, কান্ড ছড়ানো, লমবাটে, সাদা এবং শাসালো। কচি অবস্থায় সেগুলো পাতলা খোসা দ্বারা আবৃত থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়। কন্দের আকৃতি অনিয়মিত এবং দৈর্ঘ্য ১.০-২.৫ সেমি। কচি অবস্থায় কন্দ সাদা ও রসালো থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়ে বাদামী বা প্রায় কালো বর্ণের হয়। পাতা ঘন সবুজ, সোজা ও কিছুটা মোড়ানো, ৫-১৫ সেমি লম্বা ও ৫ মিমি চওড়া ।
পুষপবিন্যাস সরল বা যৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি)। যার বিপরীত দিকে ২-৪টি মঞ্জরীপত্র রয়েছে (ছবি ৯৮)। লালচে বাদামী রঙের ফলের কীলক মঞ্জরী আমেবলের শেষ প্রান্ত সাজানো থাকে। সংখ্যায় ৩-৮টি প্রাথমিক পুষ্প প্রান্তর দৈর্ঘ্য ২-৫ সেমি যার অগ্রভাগে ছোট ছড়ায় ৩-১০টি কীলক মঞ্জরী রয়েছে। এগুলো কখনো কখনো ছোট শাখায়, আবার কখনো
কখনো ছড়ার গোড়ায় ১-২টি খাটো দ্বিতীয় পর্যায়ের পুষপ প্রানে- অবস'ান করে। কীলক মঞ্জরী ১.০-২.৫ সেমি লম্বা ও ১.৫-২.০ মিমি চওড়া, অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ও সুঁচালো। পরিণত অবস'ায় সেগুলোতে ১০-৪০টি লালচে বাদামী রঙের ফল একের পর এক ঘনভাবে সাজোনো থাকে । বাইরের থোকাগুলো ৩-৪ মিমি লম্বা ও এদের অগ্রভাগ ভোঁতা হয় । ফল ডিমবাকৃতি ১.৫ মিমি লম্বা । পাকা ফলের রঙ কালো। ভূমিজ কান্ড, কন্দ ও বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয় ।
আংগুলি ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Digitaria ciliaris (Retz.) Koel.
আংগুলি ঘাস ২০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ভূমিতে শায়িত একবর্ষী বা অল্প জীবনকালের বহুবর্ষী আগাছা। এটি মুক্তভাবে শাখা-প্রশাখা দেয় এবং নিচের গিঁট থেকে শেকড় ছাড়ে। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমযুক্ত। পাতার ফলকগুলো চওড়া এবং সরল, ৫-১৫ সেমি লম্বা এবং ৩-৪ মিমি চওড়া। পাতাগুলো সাধারণতঃ লোমবিহীন এবং অমসৃণ কিনার ঢেউ খেলানো। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, ১-৩ মিমি লম্বা এবং প্রান্ত ভাগ ছেটে ফেলার মত দেখায় ।
পুষপবিন্যাসটি ৩-৮টা রেসিম বিশিষ্ট একটি ছড়া ও ছড়াটি ৫-১৫ সেমি লম্বা । ছড়াগুলো প্রায়ই মাঝের বোঁটার উপরের চারিদিকে চক্রাকারে অবস্তান করে, কিন' কখনো কখনো ২ সেমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ক্ষুদ্র সাধারণ দন্ড বরাবর সাজানো থাকে। রেসিম লমবা পাখাযুক্ত লোমবিহীন। প্রায় ৩ মিমি লমবা কীলক মঞ্জরীগুলো দন্ডের একধার বরাবর দুই সারিতে ঠাসা অবস্থায় থাকে। নিচের ত্রিকোণাকৃতির তুষ (গ্লুম) প্রায় ৩ মিমি লম্বা, তলোয়ারাকৃতির উপরের বর্মপত্রিকা কীলক মঞ্জরীর অর্ধেক থেকে পাঁচ ভাগের চার ভাগ অংশের সমান। নিচের বড় তুষ (লেমা) মোটামুটি তলোয়ারাকৃতির ৫-৭টি শিরা এবং বিভিন্ন পরিমাণ লোমযুক্ত। ফল বিভিন্ন প্রকার ডিমবাকৃতির ক্যারিওপ্সিস। বীজ দ্বারা বংশ বিসতার হয়ে থাকে ।
আংগুলি ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Digitaria setigera Roth ex R&S
এটি মোটামুটি আংগুলি ঘাস-এর মত, কিন' সাধারণতঃ আরো বেশী লমবা (১ মিটার বা বেশী) হয়। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমবিহীন একটি সাধারণ দন্ডের ৬ সেমি পর্যন- ৫-৬টি রেসিম (অনিয়ত) চক্রাকারে সাজানো থাকে। নীচের বর্মপত্রিকা নেই বা থাকলেও অতি ক্ষুদ্র শিরাবিহীন পাতলা ঝিল্লীর মত ।
ক্ষুদে শ্যামা
বৈজ্ঞানিক নাম: Echinochloa colona (L.) Link
ক্ষুদে শ্যামা মসৃণ, ৭০-৭৫ সেমি লম্বা গুচ্ছযুক্ত এক বর্ষজীবি ঘাস। ইহা সাধারণতঃ মাটির উপর ছড়িয়ে থকে এবং নিচের গিঁটে শেকড় গজায়। কান্ড চ্যাপ্ট, গোড়ার দিকে সচরাচর লাল বেগুনী রঙের এবং গিট সাধারণতঃ মোটা থাকে। পাতার খোল মসৃণ এবং মাঝে মধ্যে চ্যাপ্টা হয়। পাতার খোলের কিনারগুলোর উপরিভাগ মুক্ত থাকে এবং গোড়ার অংশ কখনো লালচে হয়। পাতার ফলক মসৃণ, চওড়া, সরল তলোয়ারাকৃতি এবং নরম । ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং ৩-৭ মিমি চওড়া হয় । পাতায় কখনো কখনো বেগুনী রঙের তির্যক ডোরা রেখা থাকে।
সবুজ থেকে বেগুনী রঙের পুষপবিন্যাস ৬-১২ সেমি লম্বা এবং ৪-৮টা খাটো, ১-৩ সেমি লম্বা ও ৩-৪ মিমি চওড়া ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট উর্ধমুখী ছড়া। শাখাগুলো বড় থেকে ক্রমশঃ ছোট হয় বা প্রায় আধাআধি দূরত্বে প্রধানতঃ এককভাবে থাকে, কিন' মাঝে-মধ্যে দুটি একসাথেও অবস্থান করে। ছোট্ট ছড়াগুলো প্রধান শাখায় একটির পর আরেকটি সাজানো থাকে। কীলক মঞ্জরীগুলো গোলাকার থেকে ডিমবাকৃতি সুঁচালো ২-৩ মিমি লম্বা এবং শাখার এক প্রান্ত বরাবর চার সারিতে ঘনভাবে সাজানো থাকে। এরা প্রায় বোঁটাহীন, কখনো কখনো প্রায় ১ মিমি লম্বা শুংযুক্ত। ফল গোলাকৃতির ক্যারিওপসিস্। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে ।
শ্যামা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Echinochloa crus-galli (L.) Peauv
শ্যামা ঘাস, ২ মি পর্যন্ত লম্বা এক বর্ষজীবি ঘাস যার শিকড় ঘন এবং কান্ড শক্ত ও ছিদ্র বহুল। কান্ডের গোড়ার দিকে কখনো কখনো চাপা থাকে। পাতা সরল, ৪০ সেমি লম্বা এবং ৫-১৫ মিমি চওড়া ।
পাটল থেকে বেগুনী, মাঝে মধ্যে সবুজ বর্ণের পুষপবিন্যাস ১০-২৫ সেমি লম্বা, নরম এবং ঘন কীলক মঞ্জরী বিশিষ্ট হেলে পড়া ছড়া। সর্বনিম্ন শাখা-প্রশাখাগুলো সবচেয়ে বড়, মাঝে মধ্যে ১০ সেমি পর্যন্ত লমবা হয়। পাকার সময় ছড়াগুলো পুনরায় শাখা ছাড়ে এবং ছড়িয়ে থাকে। সাধারণতঃ প্রধান শাখার গিঁটগুলো লোমযুক্ত হয়। কীলক মঞ্জরীগুলো ডিমবাকৃতি এবং সুঁচালো, ৩.০-৩.৫ মিমি লম্বা এবং প্রায়শই কিছুটা লোমশ। পাকার সময় তারা সহজেই ঝরে পড়ে। নীচের বর্ম পত্রিকা কীলক মঞ্জরীর তিন ভাগের এক থেকে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ অংশের সমান। শুংগুলো প্রধানতঃ লাল বা বেগুনী রঙের এবং ২.৫ সেমি লম্বা । প্রথম ক্ষুদ্র পুষিপকার বড় তুষ বা ‘লেমা’ মতল বা কিছুটা উত্তল ও বিবর্ণ। ফল ২ মিমি লম্বা একটি ক্যারিওপ্সিস। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
শ্যামাঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম - Echinochloa glabrescence Munro Ex Hook F
এটি ক্রাসগেলির মত, তবে কেবল ০.৫-১ মি উঁচু হয়। পাতার ফলক সুঁচালো। পাতার খোলগুলো প্রায় বন্ধ এবং মাঝে মধ্যে ছড়ানো থাকে। কীলক মঞ্জরীগুলো ডিমবাকৃতি এবং প্রায় ৩ মিমি লমবা হয়। প্রথম ক্ষুদ্র পুষিপকার বড় তুষ বা লেমা' বাইরের দিকে বাঁকা এবং উজ্জল। শুং থাকলে প্রায় ১ সেমি লম্বা হয়।
চাপড়া ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Eleusine indica (L.) Gaertn
চাপড়া একটি মসৃণ বা কিছুটা লোমশ গুচ্ছযুক্ত ঘাস। ভূমিতে শায়িত থেকে খাড়া, ৩০-৯০ সেমি লম্বা এক বর্ষজীবি ঘাস। সাদা বা ধূসর বর্ণের কান্ডটি পার্শ্বে চওড়া, মসৃণ বা ধার বরাবর কিছু লমবা লোমযুক্ত। পাতার খোল ৬-৯ সেমি লম্বা, পার্শ্বে চওড়া এবং ফলক সন্ধিতে কয়েকটি লম্বা লোম আছে। পাতার ফলক সমতল বা ভাজ করা রৈখিক তলোয়ারকৃতির ১০-৩০ সেমি লম্বা এবং ৩-৬ মিমি চওড়া। কিনার সমান-রাল প্রায় এবং অগ্রভাগ অপেক্ষাকৃত ভোতা। এর উপরিভাগে কিছু ছড়ানো লোম আছে। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, অগ্রভাগ খাঁজকাটা। পাতার খোল ও ফলকের সন্ধিস'লের ধার বরাবর লম্বা লোম আছে।
পুষপবিন্যাস গোড়ার দিকে বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত থাকে। মাঝে মধ্যে নিচের গিঁটগুলো থেকে শিকড় গজায়। আগার দিকের ৩-৬টি ছড়া ৪-৮ সেমি লম্বা এবং ৩-৬ মিমি চওড়া হয়। মাঝে মধ্যে এগুলোর ঠিক নীচে ১-২টি অতিরিক্ত ছড়াও থাকে। অসংখ্য কীলক মঞ্জরী বোঁটাশুন্য, শুংবিহীন, ৪-৫ মিমি লম্বা, পার্শ্বে চাপা এবং চওড়া যা প্রধান শাখার নিচ বরাবর দু’সারিতে ঘনভাবে সাজানো থাকে ।
বড় জাভানি বা জৈনা
বৈজ্ঞানিক নাম Fimbristylis miliaceae (L.) vahl
জৈনা একটি খাড়া, গুচ্ছভূক্ত, ২০-৭০ সেমি লম্বা একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। জৈনার কান্ড নরম, গোড়ার দিকে চ্যাপ্টা এবং উপরে ৪-৫টা শক্ত কোনা আছে। পুষপকান্ড ০.৫-১.৫ মিমি মোটা এবং পুষপবিন্যাসের চেয়ে খাটো ২-৪টি অসমান মঞ্জরীপত্র রয়েছে। গোড়ার পাতাগুলো ৩৫ মিমি লম্বা, ১.০-২.৫ মিমি চওড়া এবং পাতার খোল মোটামুটিভাবে একে অপরের উপর অবস্তান করে । কান্ডের পাতাগুলোর ফলক খুবই ছোট।
পুষপবিন্যাস শিথিলভাবে ছড়ানো পূর্ণযৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি), ৬-১০ সেমি লম্বা এবং ২.৫-৪.০ সেমি চওড়া। ইহার অসংখ্য একক কীলক মঞ্জুরী গোলাকার, বাদামী বা খড় বর্ণের এবং ২.০-২.৫ মিমি চওড়া ব্যাস বিশিষ্ট। ফ্যাকাশে সাদা থেকে বাদামী বর্ণের ফল ত্রিকোণী একিন যা ০.৫-১.০ মিমি লমবা এবং ০.৭৫ মিমি চওড়া হয় এবং প্রত্যেক ধারে তিনটি শিরা রয়েছে। বীজদ্বারা বংশ বিস্থার করে।
কলমিলতা
বৈজ্ঞানিক নাম Impoea aquatica Forssk
কলমিলতা একটি মসৃণ, ব্যাপকভাবে ছড়ানো বহুবর্ষজীবি লতা এবং কান্ডগুলো লতিয়ে চলে অথবা কখনো কখনো কাদার উপর কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে, কিন্তুযখন পানিতে ভাসে তখন ফাপা নলের মত। কলমিলতার গিঁটসমূহ থেকে শেকড় গজায়। পাতাগুলো সরল ৭-১৫ সেমি লম্বা ও প্রায় ৩.৫ সেমি চওড়া এবং সূঁচালো আগাসহ আয়তাকার থেকে গোলাকার। পাতার কিনারগুলো সমান বা কিছুটা খাছকাটা। বোঁটাগুলো ২.৫-১৫.০ সেমি লম্বা। সাদা থেকে ঘিয়া বা বেগুনী বর্ণে মাত্র একটি ফুল পাতার গোড়ায় জন্মে এবং ফুলটি ৫-১৫ সেমি লমবা বোঁটাযুক্ত হয়।
ফুল গোলাকার, খোসা দিয়ে ঢাকা এবং প্রায় ১ সেমি লম্বা হয়। এর দু’টো কক্ষে চারটা বীজ থাকে। হালকা বাদামী বর্ণের বীজ প্রায় ৪ মিমি লমবা এবং ৫-৭ মিমি চওড়া, মসৃণ অথবা খাটো, ঘন ও ধূসর বর্ণের লোমযুক্ত হয়। বীজ বা গাছ থেকে বংশ বিস্থার হয়ে থাকে।
মোরারো ঘাস/ মনা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Ischaemum rugosum Salisb.
মোরারো ঘাস একটি আগ্রাসী খাড়া বা ছড়ানো গুচ্ছভূক্ত এক বর্ষজীবি ঘাস। এটি ০.৬-১.২ মি লম্বা এবং এর দু’টো লমবা শুংযুক্ত রেসিম ও শিরাযুক্ত কীলক মঞ্জরী রয়েছে। লোমযুক্ত গিঁটসহ কান্ডগুলো বেগুনী বর্ণের। ফুল হওয়া কান্ডগুলোর গিঁটে লমবা লোম আছে। পাতার ফলকগুলো সরল তলোয়ারাকৃতি। ১০-৩০ সেমি লম্বা ও ৫-১৩ মিমি চওড়া এবং উভয় পার্শ্বে ছড়ানো লোম আছে। লোমশ কিনারসহ সবুজ বা বেগুনী রঙের পাতার খোল ঢিলা থাকে (ছবি ১১২)।
পাকার সময় পুষপবিন্যাস ৫-১০ সেমি লম্বা দু’টো রেসিমে বিভক্ত হয়। হলদে সবুজ কীলক মঞ্জরীগুলো ৬ মিমি লমবা জোড় হিসেবে থাকে যার একটি বোঁটাবিহীন ও অন্যটি ৬ মিমি লমবা বোঁটাযুক্ত হয়। শুঙ্গগুলো ১.৫-২.৫ সেমি লম্বা, সরু এবং গোড়ার দিকে কোঁকড়ানো। নিচের বর্মপত্রিকাগুলোর ৩-৬টা সুষপষ্ট শিরা রয়েছে। ফল লালচে বাদামী বর্ণের কেরিওপ্সিস, আয়ত তলোযারাকৃতি, আগা সুঁচালো এবং ১.৫-২.৫ মিমি লমবা। বীজ দ্বারা বংশ বিস-ার করে।
ফুলকা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Leptochloa chinensis (L.) Nees
ফুলকা ঘাস একটি দৃঢ়ভাবে গুচ্ছভূত জলজ বা আধাজলজ একবর্ষ বা স্বল্পজীবী ৩০ সেমি-১.০ মি উচুঁ গাছ। এদের সাধারণতঃ পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। দূর্বল থেকে শক্ত কান্ডগুলো শাখাযুক্ত গোড়া থেকে বেরিয়ে আসে। পাতা ও ছড়াগুলো কখনো কখনো লালচে থেকে বেগুনী বর্ণের হয় । পাতার ফলক চওড়া এবং আগার দিকে সূঁচালো সরল, ১০-৩০ সেমি লম্বা এবং ০.৩-১.০ সেমি চওড়া। লিগিউল ১-২ মিমি লম্বা এবং অগভীরভাবে লোমের মত অংশে বিভক্ত। পুষপবিন্যাসটি একটি ছড়া যার প্রধান শাখা ১০-৪০ সেমি লম্বা হয়।
এর ৫-১৫ সেমি লমবা অসংখ্য শাখা-প্রশাখাগুলো সোজা এবং ছড়ানো। কীলক মঞ্জরীগুলো ২.৫-৩.৫ মিমি লম্বা যার ৪-৬টি, সচরাচর ৫টি ফুল এবং ০.৫-০.৭ মি মি লম্বা ছোট বোঁটা আছে । মঞ্জুরী ধূসর, সবুজ বা লাল বর্ণের হয়ে থাকে । ফুল প্রায় ০.৮ মি মি লম্বা গোলাকৃতির কেরিওপ্সিস । বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে ।
পানিকচু
বৈজ্ঞানিক নাম Monochoria Vaginalis (Burm.f.) presl
পানিকচু বা নখা একটি এক বর্ষজীবি, আধাজলজ ৪০-৫০ সেমি লম্বা এবং চওড়া পাতা বিশিষ্ট আগাছা। এই এক বীজপত্রী আগাছার খাটো, মাংসল কান্ড এবং খুবই ছোট্ট শেকড় আছে। পাতাগুলো উজ্জ্বল গাঢ় সবুজ, আয়তাকার থেকে ডিমবাকৃতি এবং ইহার আগা খুবই তীক্ষ্ন। গোলাকৃতি গোড়ার দিক ১০-১৫ সেমি লম্বা এবং ৩.৫ সেমি চওড়া। বোঁটাগুলো ১০-১২ সেমি লমবা, নরম, ফাঁপা এবং লমবালমিব শিরা-উপশিরাযুক্ত। পুষপবিন্যাস একটি ৩-৬ সেমি লমবা ছড়া। এতে কয়েকটি নীল বর্ণের প্রায় ১ সেমি লম্বা ফুল থাকে যা পাতার মত একটা আবরণী থেকে বের হয়। ফুলের বোঁটাগুলো লমবায় ১ সেমি এর চেয়েও কম।
খোসাযুক্ত ঢাকা ফল প্রায় ১ সেমি লম্বা এবং তিন ভাগে বিভক্ত। বীজগুলো আয়তাকার এবং প্রায় ১ মিমি লম্বা। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে।
ঝরাধান বা লালধান
বৈজ্ঞানিক নাম- Oryza rufipogon Griff
ঝরাধান বা লালধানকে জংলী ধানও বলা হয়। এ ধান চাষাবাদযোগ্য ধানের মতই এবং এর সংগে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন ঘটে থাকে। কিন্তু চাষযোগ্য ধানের সংগে বৈসাদৃশ্য এই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধানগুলো পুরোপুরি পাকার আগেই ঝরে পড়ে এবং ছড়া খাড়া থাকে। অবশ্য যেগুলোতে ধান ঝরে পড়ে না সেগুলোর ছড়া নুয়ে পড়ে। কীলক মঞ্জরীগুলো শুংযুক্ত বা শুংবিহীন হতে পারে এবং শুংয়ের দৈর্ঘ্যের ব্যাপক তারতম্য ঘটে। পাকা ধানের খোসাগুলো খড়ের রং বা কালচে হয়। চালের বহিরাবরণ রঙিন। ইহা পাকার সময় ও বীজের বয়স অনুযায়ী তা ধূসর থেকে লাল বর্ণে রূপান্তরিত হয়। বীজগুলো মাটিতে বহুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে, কিন' যদি চাষাবাদযোগ্য ধানের মত কাটা ও ব্যবহার করা যায় তাহলে সুপ্ত অবস্থা ভেংগে দেয়া সমভব ।
ঝিল মরিচ
বৈজ্ঞানিক নাম Sphenoclea zeylanica Gaertn
ঝিল মরিচ মসৃণ, শক্ত, মাংসল, ফাঁপা, বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ও ০.৩-১.৫ মি উঁচু কান্ডসহ একটি খাড়া ও এক বর্ষজীবি চওড়া পাতা আগাছা। পাক মেরে সাজানো পাতাগুলো সাধারণ গোলাকার থেকে তলোয়ারাকৃতির, ১০ সেমি লম্বা এবং ৩ সেমি চওড়া। পাতাগুলোর আগা চিকন থেকে সূচাকৃতির। পাতার ছোট বোঁটা এবং নিখাঁজ কিনার রয়েছে।
সবুজ রঙের, পুষপবিন্যাস ৮ সেমি লম্বা বোঁটার উপর অবসি'ত। ইহা ৭.৫ সেমি লম্বা এবং ১২ মিমি চওড়া একটি গিজানো ছড়া। গাঢ় সাদা থেকে সবুজ বর্ণের ফূলগুলো প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা এবং ২.৫ মিমি চওড়া হয়ে থাকে।
ফল একটি গোলাকার বীজকোষ, ৪-৫ মিমি চওড়া ও খাড়াভাবে বিভক্ত। এর হলদে বাদামী বর্ণের অসংখ্য বীজগুলো ০.৫ মিমি লমবা। বীজদ্বারা বংশ বিস্তার করে।
কেশুটি
বৈজ্ঞানিক নাম- Ecliptaalba (L.) Hassk
কেশুটি বর্ষজীবী অথবা বহুবর্ষজীবী একটি আগাছা। এটি অ্যাস্টারেসী পরিবারের অনর্-ভূক্ত। এটি মাটিতে শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ আগাছার পাতা ময়লা সবুজ রঙের ও খসখসে হয়। এর পুষপমঞ্জরী সরু ও পেয়ালা আকৃতির, দেখতে মেয়েদের নাকফুলের মতো। বৃতির মধ্যে সাদা রঙে ফুল ঘনভাবে সাজানো থাকে। পুষপমঞ্জরির এ আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখে একে সহজেই সনাক্ত করা যায়। মার্চ-এপ্রিলে এর চারা জন্মায় এবং জুন-জুলাইতে পরিপক্ক হয়। এরা সাধারণত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। আউশ ধানের জমিতে এ আগাছার প্রাদুর্ভাব হয়ে থাকে। এ আগাছার অভিযোজনের ক্ষমতার গুণে এরা ভিজা ও শুকনা উভয় মাটিতে জন্মাতে পারে এবং উঁচু ও নিচু জমিতে সমানভাবে সহজে বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিমাণে কেশুটির প্রাদুর্ভাবে ধানের ফলন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে ।
কচুরি পানা
বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia crassipes (Mart.) Solms
কচুরি পানা চড়হঃবফবৎরধপবধবপরিবারের অর্ন্তভূক্ত একটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ শ্রেণীর জলজ আগাছা। এরা পানির উপর ভাসমান অথবা কাদায় শিকড় ঢুকিয়ে পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে আধাস'লজ আগাছা হিসেবে বেঁচে থাকে। এর কান্ড খাটো এবং এতে সেটালন থাকে। কালো রঙের লোমযুক্ত সরু শিকড় কান্ডের নিচে গোছার মতো গঠন সৃষ্টি করে। পাতার ফলক কিডনির মতো বা গোলাকার। পাতার বোঁটা স্ফীত এবং এর উপর ভিত্তি করে কচুরিপানা পানিতে ভেসে থাকতে পারে। এরা দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে। একটি গাছ থেকে এক মৌসুমে অসংখ্য গাছ জন্মাতে পারে। এদের ফুল সাদা বা নীলাভ বেগুনি। পাপড়ির কেন্দ্র হলুদ রঙের আভাযুক্ত। সাধারণত সেটালনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। কখনো কখনো বীজের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার করে। এটি জলী আমন ক্ষেত ছাড়াও নিচু জমিতে আমন ধান ও বোরো ধানের ক্ষতি করতে পারে। নতুন পানির সাথে বোনা আমন ধানের জমিতে একবার কচুরি পানা ঢুকে গেলে সেখানে ফসল ফলানো কষ্টকর। কচুরি পানা শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পর্যন্ত গভীর পানির ধানের ক্ষতি করতে পারে ।
টোপাপানা/ক্ষুদেপানা
বৈজ্ঞানিক নাম- Pistia stratiotes L.
টোপাপানা অৎধপবধব পরিবারের অনর্-ভূক্ত একটি বহুবর্ষজীবী মুক্ত ও ভাসমান জলজ আগাছা। এর কান্ড ছোট আকারের এবং পাতা চক্রাকারে বাঁধাকপির পাতার মতো সাজানো অবস্থায় উৎপন্ন হয়। পাতাগুলো মখমলের মতো লোমযুক্ত এবং পাতার নিচের দিকে স্পষ্ট শিরাযুক্ত। সেটালন হলদে সবুজ রঙের এবং কালো লোমযুক্ত। প্রধানত সেটালনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এটি জলী আমন ধান ছাড়াও রোপা আমন ধানের ক্ষেতে বেশি পরিমাণে জন্মে ধানের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
চেচড়া
বৈজ্ঞানিক নাম -Scripus maritimus L
চেচড়া ঈুঢ়বৎধপবধব পরিবারের অন্তর্ভূক্ত একটি বর্ষজীবী সেজ জাতীয় আগাছা। এটি প্রায় ১.৫ মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড খাড়া, মসৃণ ও ত্রিকোণাকার। এরা ভিজা ও পানিযুক্ত মাটিতে বেশি পরিমাণ জন্মায়। এ আগাছা বোরো ও আমন ধানের জমিতে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। কখনো কখনো আউশ ধানে এদের পাওয়া যায়। তবে এ আগাছা বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি হয় এবং ধান ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এ আগাছা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। এরা সাধারণত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। কন্দ এবং সেটালনের মাধ্যমেও এদের বংশবৃদ্ধি ঘটতে পারে। এ আগাছা দমন করা বেশ কঠিন। জলাবদ্ধ/ভিজা কাদাময় জমিতে এ আগাছা বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
কাকপায়া ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Dactyloctenium aegyptium (L.) Willd..
কাকপায়া একটি বর্ষজীবী ঘাসজাতীয় আগাছা ও চড়ধপবধব পরিবারের অন-র্ভূক্ত। এটি প্রায় ২০-৪০ সেমি লম্বা হয়। এ আগাছার কান্ডের পূর্ব থেকে শিকড় জন্মায়। কান্ডে অনেক শাখা-প্রশাখা উৎপন্নের ফলে এক ধরনের গুচ্ছের সৃষ্টি হয়। এর ২-৭টি পুষপছড়া নিয়ে গঠিত পুষপবিন্যাস হাতের আংগুলের মতো বোঁটার আগায় সাজানো থাকে যা দেখতে কাকের পায়ের মতো। এটি বোনা আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। এর কারণে আউশ ধানের শতকরা ১০-৭৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।
গৈচা
বৈজ্ঞানিক নাম
গৈচা একটি বহুবর্ষজীবী ঘাসজাতীয় আগাছা এবং চড়ধপবধব পরিবারের অন-র্ভূক্ত। এর কান্ড মাটিতে শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধি পায় । সবুজ অথবা হালকা খয়েরি রঙের কান্ড বেশ শক্ত হয়। কান্ডের আগায় ৩-৬ সেমি লমবা দুু’টি পুষপমঞ্জরী হাতের আঙুলের মতো ছড়ানো থাকে। এ দু’টি স্পাইক দেখে সহজেই এদেরকে সনাক্ত করা যায়। এ ঘাস দেখতে অনেকটা দুর্বা ঘাসের মতো তবে আকারে কিছুটা বড়। এটি স্যাঁতস্যাঁতে বা জলাবদ্ধ জমিতে জন্মাতে পারে। সাধারণত বীজ ও কান্ডের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। এ আগাছা সরাসরি বোনা, ভিজা ও রোপা ধান ক্ষেতে জন্মাতে দেখা যায়। এরা ধানের সাথে প্রতিযোগিতা করে শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমিয়ে দিতে পারে ।
দমন ব্যবস্থাপনা
জৈবসার ও ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সাথে আগাছার বংশ বিস্তারে সক্ষম বীজ ও কন্দ যেন মিশে বা লেগে না থাকে সেদিকে সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যার মধ্যে উঁচু জমিতে হালকা লাঙল ও আঁচড়া দিয়ে মাটি আলোড়িত করে আগাছা দমন করা যায়। এছাড়া কান্ডসহ হাত বা নিড়ানী দিয়ে তুলেও এ আগাছা দমন করা যায়।
ধানের জমিতে পানি জমা রাখা এবং ধান পাকার আগেই রগিং করে আগাছা দমন করা যায়।
আগাছা পরিসকারের সময় কন্দসহ হাত, নিড়ানী বা কাঁচি দিয়ে তুলে হলদে মুথা দমন করা যায় ।
কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এ আগাছা দমন করা যায় ।
একই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন করেও এ আগাছা দমন করা যায় ।
বীজ পাকার আগেই এ আগাছা তুলে ফেলা উচিৎ ।
আগাছা দমনের জন্য অনুমোদিত আগাছানাশক প্রয়োগ করা।
{বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট}
সব ধরনের ধানের জমিতেই আগাছা জন্মে। আগাছা সময়মত পরিষ্কার না করলে তা ধানের সাথে খাদ্য ও জায়গা নিয়েপ্রতিযোগিতা করে। আগাছা ধান ফসলের সাথে আলো, পানি ও পুষ্টি নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। ফলে ধানের গাছ ভালোভাবে বাড়তে পারেনা এবং তাতে ফলন কমে যায়। এজন্য ধানক্ষেতের আগাছা চেনা ও সেগুলো দমন করা দরকার।
ধান ক্ষেতের আগাছা পরিচিতি
(Identification of rice weeds)
হলদে মুথা
বৈজ্ঞানিক নাম Cyperus difformis L.
হলদে মুথা একটি ২০-৭০ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ, ঘন গুচ্ছযুক্ত এবং একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। কান্ড মসৃণ, উপরের দিকে ত্রিকোণাকার এবং ১-৪ মিলিমিটার পুরু। পাতার খোল নলের মত এবং গোড়ার দিকে যুক্ত থাকে। নিচের দিকের খোলগুলো খড় থেকে বাদামী রঙের হয়। গোড়ার দিকে ৩-৪টি ঢলঢলে এবং সারি সারি পাতা ১০-৪০ সেমি লমবা ও ২-৩ মিলিমিটার চওড়া হয়ে থাকে।
পুষপবিন্যাস ঘন, গোলাকার সরল বা যৌগিক আমেবল জাতীয় (ছাতাকৃতি) যা ৫-১৫ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। তার সংগে ২-৪টি, সচরাচর ৩টি ১৫-৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৬ মিলিমিটার চওড়া পাতার মত বৃতি বিপরীত দিকে অবস্থান করে। পুষপবিন্যাসের প্রাথমিক পুষপপ্রান-গুলো ১ সেন্টিমিটার লমবা। কতকগুলো বোঁটা ছাড়া এবং কতকগুলোর লমবা বোঁটা আছে। পুষপপ্রান্তগুলো গুচ্ছভূত ও ৬ মিমি ব্যাসযুক্ত ডিমবাকৃতি বা গোলাকার। গুচ্ছগুলো ১০-৩০টি ফুল সমবলিত ২-৫ মিলিমিটার লমবা ও ১.০-১.৫ মিলিমিটার চওড়া সবুজ রঙের রৈখিক বা চক্র কীলক মঞ্জরী দ্বারা গঠিত। ফল ০.৬ মিমি লম্বা ও কিছুটা চ্যাপ্টা বৃত্তাকার থেকে ডিমবাকৃতি বাদামী রঙের ‘একিন’। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
বড়চুঁচা
বৈজ্ঞানিক নাম- Cyperus iria L.
বড়চুঁচা মসৃণ, গুচ্ছযুক্ত ত্রিকোণাকৃতির কান্ড বিশিষ্ট, ২০-৬০ সেমি লমবা একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। শিকড়গুলো হলদে লাল এবং আঁশযুক্ত। পাতার খোল পাতলা এবং কান্ডের গোড়ার দিকে আবৃত রাখে। পাতার ফলক সোজা তলোয়ারের মত, পুষপ কান্ড থেকে খাটো এবং প্রায় ৫ মিলিমিটার চওড়া।
পুষপবিন্যাসটি যৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি)। প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পুষপপ্রান-গুলো যথাক্রমে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার ও ২ সেন্টিমিটার লমবা। বিপরীতভাবে অবস্থানরত ৩-৫টি, কখনো কখনো ৭টি মঞ্জুরীপত্র সংযুক্ত থাকে (ছবি ৯৭)। সবচেয়ে নিচের মঞ্জরীপত্রটি পুষপবিন্যাস অপেক্ষা লমবা। ২-৩ সেন্টিমিটার লমবা শস্য মঞ্জরীর (স্পাইক) শাখার অগ্রভাগ লমবা ও ছড়ানো। হলদে বাদামী থেকে সবুজ রঙের অসংখ্য কীলক মঞ্জরী (স্পাইকলেট) খাড়াভাবে ছড়ানো। দৈর্ঘ্য ৩-১০ মিলিমিটার এবং ১.৫-২.০ মিলিমিটার ।
হলদে বাদামী রঙের ফল একিন জাতীয়, ডিমবাকৃতি ত্রিকোণাকার এবং ১.০-১.৫ মিলিমিটার লম্বা । বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
ভাদাইল বা মুথা
বৈজ্ঞানিক নাম Cyperus rotundus L
এটি একটি খাড়া, মূল ভূগর্ভস' কান্ড (রাইজোম), কান্ডে (টিউবার) রূপান্তরিত এবং ২০ সেমি উঁচু বহুবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ)। গোড়ার স্ফীত কন্দসহ কান্ডগুলো খাড়া, শাখাবিহীন, মসৃণ ও ত্রিকোণাকৃতি। মূল শায়িত, কান্ড ছড়ানো, লমবাটে, সাদা এবং শাসালো। কচি অবস্থায় সেগুলো পাতলা খোসা দ্বারা আবৃত থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়। কন্দের আকৃতি অনিয়মিত এবং দৈর্ঘ্য ১.০-২.৫ সেমি। কচি অবস্থায় কন্দ সাদা ও রসালো থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁশযুক্ত হয়ে বাদামী বা প্রায় কালো বর্ণের হয়। পাতা ঘন সবুজ, সোজা ও কিছুটা মোড়ানো, ৫-১৫ সেমি লম্বা ও ৫ মিমি চওড়া ।
পুষপবিন্যাস সরল বা যৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি)। যার বিপরীত দিকে ২-৪টি মঞ্জরীপত্র রয়েছে (ছবি ৯৮)। লালচে বাদামী রঙের ফলের কীলক মঞ্জরী আমেবলের শেষ প্রান্ত সাজানো থাকে। সংখ্যায় ৩-৮টি প্রাথমিক পুষ্প প্রান্তর দৈর্ঘ্য ২-৫ সেমি যার অগ্রভাগে ছোট ছড়ায় ৩-১০টি কীলক মঞ্জরী রয়েছে। এগুলো কখনো কখনো ছোট শাখায়, আবার কখনো
কখনো ছড়ার গোড়ায় ১-২টি খাটো দ্বিতীয় পর্যায়ের পুষপ প্রানে- অবস'ান করে। কীলক মঞ্জরী ১.০-২.৫ সেমি লম্বা ও ১.৫-২.০ মিমি চওড়া, অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ও সুঁচালো। পরিণত অবস'ায় সেগুলোতে ১০-৪০টি লালচে বাদামী রঙের ফল একের পর এক ঘনভাবে সাজোনো থাকে । বাইরের থোকাগুলো ৩-৪ মিমি লম্বা ও এদের অগ্রভাগ ভোঁতা হয় । ফল ডিমবাকৃতি ১.৫ মিমি লম্বা । পাকা ফলের রঙ কালো। ভূমিজ কান্ড, কন্দ ও বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয় ।
আংগুলি ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Digitaria ciliaris (Retz.) Koel.
আংগুলি ঘাস ২০-৬০ সেমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ভূমিতে শায়িত একবর্ষী বা অল্প জীবনকালের বহুবর্ষী আগাছা। এটি মুক্তভাবে শাখা-প্রশাখা দেয় এবং নিচের গিঁট থেকে শেকড় ছাড়ে। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমযুক্ত। পাতার ফলকগুলো চওড়া এবং সরল, ৫-১৫ সেমি লম্বা এবং ৩-৪ মিমি চওড়া। পাতাগুলো সাধারণতঃ লোমবিহীন এবং অমসৃণ কিনার ঢেউ খেলানো। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, ১-৩ মিমি লম্বা এবং প্রান্ত ভাগ ছেটে ফেলার মত দেখায় ।
পুষপবিন্যাসটি ৩-৮টা রেসিম বিশিষ্ট একটি ছড়া ও ছড়াটি ৫-১৫ সেমি লম্বা । ছড়াগুলো প্রায়ই মাঝের বোঁটার উপরের চারিদিকে চক্রাকারে অবস্তান করে, কিন' কখনো কখনো ২ সেমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ক্ষুদ্র সাধারণ দন্ড বরাবর সাজানো থাকে। রেসিম লমবা পাখাযুক্ত লোমবিহীন। প্রায় ৩ মিমি লমবা কীলক মঞ্জরীগুলো দন্ডের একধার বরাবর দুই সারিতে ঠাসা অবস্থায় থাকে। নিচের ত্রিকোণাকৃতির তুষ (গ্লুম) প্রায় ৩ মিমি লম্বা, তলোয়ারাকৃতির উপরের বর্মপত্রিকা কীলক মঞ্জরীর অর্ধেক থেকে পাঁচ ভাগের চার ভাগ অংশের সমান। নিচের বড় তুষ (লেমা) মোটামুটি তলোয়ারাকৃতির ৫-৭টি শিরা এবং বিভিন্ন পরিমাণ লোমযুক্ত। ফল বিভিন্ন প্রকার ডিমবাকৃতির ক্যারিওপ্সিস। বীজ দ্বারা বংশ বিসতার হয়ে থাকে ।
আংগুলি ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Digitaria setigera Roth ex R&S
এটি মোটামুটি আংগুলি ঘাস-এর মত, কিন' সাধারণতঃ আরো বেশী লমবা (১ মিটার বা বেশী) হয়। পাতার খোল সাধারণতঃ লোমবিহীন একটি সাধারণ দন্ডের ৬ সেমি পর্যন- ৫-৬টি রেসিম (অনিয়ত) চক্রাকারে সাজানো থাকে। নীচের বর্মপত্রিকা নেই বা থাকলেও অতি ক্ষুদ্র শিরাবিহীন পাতলা ঝিল্লীর মত ।
ক্ষুদে শ্যামা
বৈজ্ঞানিক নাম: Echinochloa colona (L.) Link
ক্ষুদে শ্যামা মসৃণ, ৭০-৭৫ সেমি লম্বা গুচ্ছযুক্ত এক বর্ষজীবি ঘাস। ইহা সাধারণতঃ মাটির উপর ছড়িয়ে থকে এবং নিচের গিঁটে শেকড় গজায়। কান্ড চ্যাপ্ট, গোড়ার দিকে সচরাচর লাল বেগুনী রঙের এবং গিট সাধারণতঃ মোটা থাকে। পাতার খোল মসৃণ এবং মাঝে মধ্যে চ্যাপ্টা হয়। পাতার খোলের কিনারগুলোর উপরিভাগ মুক্ত থাকে এবং গোড়ার অংশ কখনো লালচে হয়। পাতার ফলক মসৃণ, চওড়া, সরল তলোয়ারাকৃতি এবং নরম । ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং ৩-৭ মিমি চওড়া হয় । পাতায় কখনো কখনো বেগুনী রঙের তির্যক ডোরা রেখা থাকে।
সবুজ থেকে বেগুনী রঙের পুষপবিন্যাস ৬-১২ সেমি লম্বা এবং ৪-৮টা খাটো, ১-৩ সেমি লম্বা ও ৩-৪ মিমি চওড়া ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট উর্ধমুখী ছড়া। শাখাগুলো বড় থেকে ক্রমশঃ ছোট হয় বা প্রায় আধাআধি দূরত্বে প্রধানতঃ এককভাবে থাকে, কিন' মাঝে-মধ্যে দুটি একসাথেও অবস্থান করে। ছোট্ট ছড়াগুলো প্রধান শাখায় একটির পর আরেকটি সাজানো থাকে। কীলক মঞ্জরীগুলো গোলাকার থেকে ডিমবাকৃতি সুঁচালো ২-৩ মিমি লম্বা এবং শাখার এক প্রান্ত বরাবর চার সারিতে ঘনভাবে সাজানো থাকে। এরা প্রায় বোঁটাহীন, কখনো কখনো প্রায় ১ মিমি লম্বা শুংযুক্ত। ফল গোলাকৃতির ক্যারিওপসিস্। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে ।
শ্যামা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Echinochloa crus-galli (L.) Peauv
শ্যামা ঘাস, ২ মি পর্যন্ত লম্বা এক বর্ষজীবি ঘাস যার শিকড় ঘন এবং কান্ড শক্ত ও ছিদ্র বহুল। কান্ডের গোড়ার দিকে কখনো কখনো চাপা থাকে। পাতা সরল, ৪০ সেমি লম্বা এবং ৫-১৫ মিমি চওড়া ।
পাটল থেকে বেগুনী, মাঝে মধ্যে সবুজ বর্ণের পুষপবিন্যাস ১০-২৫ সেমি লম্বা, নরম এবং ঘন কীলক মঞ্জরী বিশিষ্ট হেলে পড়া ছড়া। সর্বনিম্ন শাখা-প্রশাখাগুলো সবচেয়ে বড়, মাঝে মধ্যে ১০ সেমি পর্যন্ত লমবা হয়। পাকার সময় ছড়াগুলো পুনরায় শাখা ছাড়ে এবং ছড়িয়ে থাকে। সাধারণতঃ প্রধান শাখার গিঁটগুলো লোমযুক্ত হয়। কীলক মঞ্জরীগুলো ডিমবাকৃতি এবং সুঁচালো, ৩.০-৩.৫ মিমি লম্বা এবং প্রায়শই কিছুটা লোমশ। পাকার সময় তারা সহজেই ঝরে পড়ে। নীচের বর্ম পত্রিকা কীলক মঞ্জরীর তিন ভাগের এক থেকে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ অংশের সমান। শুংগুলো প্রধানতঃ লাল বা বেগুনী রঙের এবং ২.৫ সেমি লম্বা । প্রথম ক্ষুদ্র পুষিপকার বড় তুষ বা ‘লেমা’ মতল বা কিছুটা উত্তল ও বিবর্ণ। ফল ২ মিমি লম্বা একটি ক্যারিওপ্সিস। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
শ্যামাঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম - Echinochloa glabrescence Munro Ex Hook F
এটি ক্রাসগেলির মত, তবে কেবল ০.৫-১ মি উঁচু হয়। পাতার ফলক সুঁচালো। পাতার খোলগুলো প্রায় বন্ধ এবং মাঝে মধ্যে ছড়ানো থাকে। কীলক মঞ্জরীগুলো ডিমবাকৃতি এবং প্রায় ৩ মিমি লমবা হয়। প্রথম ক্ষুদ্র পুষিপকার বড় তুষ বা লেমা' বাইরের দিকে বাঁকা এবং উজ্জল। শুং থাকলে প্রায় ১ সেমি লম্বা হয়।
চাপড়া ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম Eleusine indica (L.) Gaertn
চাপড়া একটি মসৃণ বা কিছুটা লোমশ গুচ্ছযুক্ত ঘাস। ভূমিতে শায়িত থেকে খাড়া, ৩০-৯০ সেমি লম্বা এক বর্ষজীবি ঘাস। সাদা বা ধূসর বর্ণের কান্ডটি পার্শ্বে চওড়া, মসৃণ বা ধার বরাবর কিছু লমবা লোমযুক্ত। পাতার খোল ৬-৯ সেমি লম্বা, পার্শ্বে চওড়া এবং ফলক সন্ধিতে কয়েকটি লম্বা লোম আছে। পাতার ফলক সমতল বা ভাজ করা রৈখিক তলোয়ারকৃতির ১০-৩০ সেমি লম্বা এবং ৩-৬ মিমি চওড়া। কিনার সমান-রাল প্রায় এবং অগ্রভাগ অপেক্ষাকৃত ভোতা। এর উপরিভাগে কিছু ছড়ানো লোম আছে। লিগিউল পাতলা ঝিল্লির মত, অগ্রভাগ খাঁজকাটা। পাতার খোল ও ফলকের সন্ধিস'লের ধার বরাবর লম্বা লোম আছে।
পুষপবিন্যাস গোড়ার দিকে বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত থাকে। মাঝে মধ্যে নিচের গিঁটগুলো থেকে শিকড় গজায়। আগার দিকের ৩-৬টি ছড়া ৪-৮ সেমি লম্বা এবং ৩-৬ মিমি চওড়া হয়। মাঝে মধ্যে এগুলোর ঠিক নীচে ১-২টি অতিরিক্ত ছড়াও থাকে। অসংখ্য কীলক মঞ্জরী বোঁটাশুন্য, শুংবিহীন, ৪-৫ মিমি লম্বা, পার্শ্বে চাপা এবং চওড়া যা প্রধান শাখার নিচ বরাবর দু’সারিতে ঘনভাবে সাজানো থাকে ।
বড় জাভানি বা জৈনা
বৈজ্ঞানিক নাম Fimbristylis miliaceae (L.) vahl
জৈনা একটি খাড়া, গুচ্ছভূক্ত, ২০-৭০ সেমি লম্বা একবর্ষজীবি বিরুৎ (সেজ) জাতীয় আগাছা। জৈনার কান্ড নরম, গোড়ার দিকে চ্যাপ্টা এবং উপরে ৪-৫টা শক্ত কোনা আছে। পুষপকান্ড ০.৫-১.৫ মিমি মোটা এবং পুষপবিন্যাসের চেয়ে খাটো ২-৪টি অসমান মঞ্জরীপত্র রয়েছে। গোড়ার পাতাগুলো ৩৫ মিমি লম্বা, ১.০-২.৫ মিমি চওড়া এবং পাতার খোল মোটামুটিভাবে একে অপরের উপর অবস্তান করে । কান্ডের পাতাগুলোর ফলক খুবই ছোট।
পুষপবিন্যাস শিথিলভাবে ছড়ানো পূর্ণযৌগিক আমেবল (ছাতাকৃতি), ৬-১০ সেমি লম্বা এবং ২.৫-৪.০ সেমি চওড়া। ইহার অসংখ্য একক কীলক মঞ্জুরী গোলাকার, বাদামী বা খড় বর্ণের এবং ২.০-২.৫ মিমি চওড়া ব্যাস বিশিষ্ট। ফ্যাকাশে সাদা থেকে বাদামী বর্ণের ফল ত্রিকোণী একিন যা ০.৫-১.০ মিমি লমবা এবং ০.৭৫ মিমি চওড়া হয় এবং প্রত্যেক ধারে তিনটি শিরা রয়েছে। বীজদ্বারা বংশ বিস্থার করে।
কলমিলতা
বৈজ্ঞানিক নাম Impoea aquatica Forssk
কলমিলতা একটি মসৃণ, ব্যাপকভাবে ছড়ানো বহুবর্ষজীবি লতা এবং কান্ডগুলো লতিয়ে চলে অথবা কখনো কখনো কাদার উপর কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে, কিন্তুযখন পানিতে ভাসে তখন ফাপা নলের মত। কলমিলতার গিঁটসমূহ থেকে শেকড় গজায়। পাতাগুলো সরল ৭-১৫ সেমি লম্বা ও প্রায় ৩.৫ সেমি চওড়া এবং সূঁচালো আগাসহ আয়তাকার থেকে গোলাকার। পাতার কিনারগুলো সমান বা কিছুটা খাছকাটা। বোঁটাগুলো ২.৫-১৫.০ সেমি লম্বা। সাদা থেকে ঘিয়া বা বেগুনী বর্ণে মাত্র একটি ফুল পাতার গোড়ায় জন্মে এবং ফুলটি ৫-১৫ সেমি লমবা বোঁটাযুক্ত হয়।
ফুল গোলাকার, খোসা দিয়ে ঢাকা এবং প্রায় ১ সেমি লম্বা হয়। এর দু’টো কক্ষে চারটা বীজ থাকে। হালকা বাদামী বর্ণের বীজ প্রায় ৪ মিমি লমবা এবং ৫-৭ মিমি চওড়া, মসৃণ অথবা খাটো, ঘন ও ধূসর বর্ণের লোমযুক্ত হয়। বীজ বা গাছ থেকে বংশ বিস্থার হয়ে থাকে।
মোরারো ঘাস/ মনা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Ischaemum rugosum Salisb.
মোরারো ঘাস একটি আগ্রাসী খাড়া বা ছড়ানো গুচ্ছভূক্ত এক বর্ষজীবি ঘাস। এটি ০.৬-১.২ মি লম্বা এবং এর দু’টো লমবা শুংযুক্ত রেসিম ও শিরাযুক্ত কীলক মঞ্জরী রয়েছে। লোমযুক্ত গিঁটসহ কান্ডগুলো বেগুনী বর্ণের। ফুল হওয়া কান্ডগুলোর গিঁটে লমবা লোম আছে। পাতার ফলকগুলো সরল তলোয়ারাকৃতি। ১০-৩০ সেমি লম্বা ও ৫-১৩ মিমি চওড়া এবং উভয় পার্শ্বে ছড়ানো লোম আছে। লোমশ কিনারসহ সবুজ বা বেগুনী রঙের পাতার খোল ঢিলা থাকে (ছবি ১১২)।
পাকার সময় পুষপবিন্যাস ৫-১০ সেমি লম্বা দু’টো রেসিমে বিভক্ত হয়। হলদে সবুজ কীলক মঞ্জরীগুলো ৬ মিমি লমবা জোড় হিসেবে থাকে যার একটি বোঁটাবিহীন ও অন্যটি ৬ মিমি লমবা বোঁটাযুক্ত হয়। শুঙ্গগুলো ১.৫-২.৫ সেমি লম্বা, সরু এবং গোড়ার দিকে কোঁকড়ানো। নিচের বর্মপত্রিকাগুলোর ৩-৬টা সুষপষ্ট শিরা রয়েছে। ফল লালচে বাদামী বর্ণের কেরিওপ্সিস, আয়ত তলোযারাকৃতি, আগা সুঁচালো এবং ১.৫-২.৫ মিমি লমবা। বীজ দ্বারা বংশ বিস-ার করে।
ফুলকা ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Leptochloa chinensis (L.) Nees
ফুলকা ঘাস একটি দৃঢ়ভাবে গুচ্ছভূত জলজ বা আধাজলজ একবর্ষ বা স্বল্পজীবী ৩০ সেমি-১.০ মি উচুঁ গাছ। এদের সাধারণতঃ পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। দূর্বল থেকে শক্ত কান্ডগুলো শাখাযুক্ত গোড়া থেকে বেরিয়ে আসে। পাতা ও ছড়াগুলো কখনো কখনো লালচে থেকে বেগুনী বর্ণের হয় । পাতার ফলক চওড়া এবং আগার দিকে সূঁচালো সরল, ১০-৩০ সেমি লম্বা এবং ০.৩-১.০ সেমি চওড়া। লিগিউল ১-২ মিমি লম্বা এবং অগভীরভাবে লোমের মত অংশে বিভক্ত। পুষপবিন্যাসটি একটি ছড়া যার প্রধান শাখা ১০-৪০ সেমি লম্বা হয়।
এর ৫-১৫ সেমি লমবা অসংখ্য শাখা-প্রশাখাগুলো সোজা এবং ছড়ানো। কীলক মঞ্জরীগুলো ২.৫-৩.৫ মিমি লম্বা যার ৪-৬টি, সচরাচর ৫টি ফুল এবং ০.৫-০.৭ মি মি লম্বা ছোট বোঁটা আছে । মঞ্জুরী ধূসর, সবুজ বা লাল বর্ণের হয়ে থাকে । ফুল প্রায় ০.৮ মি মি লম্বা গোলাকৃতির কেরিওপ্সিস । বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে ।
পানিকচু
বৈজ্ঞানিক নাম Monochoria Vaginalis (Burm.f.) presl
পানিকচু বা নখা একটি এক বর্ষজীবি, আধাজলজ ৪০-৫০ সেমি লম্বা এবং চওড়া পাতা বিশিষ্ট আগাছা। এই এক বীজপত্রী আগাছার খাটো, মাংসল কান্ড এবং খুবই ছোট্ট শেকড় আছে। পাতাগুলো উজ্জ্বল গাঢ় সবুজ, আয়তাকার থেকে ডিমবাকৃতি এবং ইহার আগা খুবই তীক্ষ্ন। গোলাকৃতি গোড়ার দিক ১০-১৫ সেমি লম্বা এবং ৩.৫ সেমি চওড়া। বোঁটাগুলো ১০-১২ সেমি লমবা, নরম, ফাঁপা এবং লমবালমিব শিরা-উপশিরাযুক্ত। পুষপবিন্যাস একটি ৩-৬ সেমি লমবা ছড়া। এতে কয়েকটি নীল বর্ণের প্রায় ১ সেমি লম্বা ফুল থাকে যা পাতার মত একটা আবরণী থেকে বের হয়। ফুলের বোঁটাগুলো লমবায় ১ সেমি এর চেয়েও কম।
খোসাযুক্ত ঢাকা ফল প্রায় ১ সেমি লম্বা এবং তিন ভাগে বিভক্ত। বীজগুলো আয়তাকার এবং প্রায় ১ মিমি লম্বা। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করে থাকে।
ঝরাধান বা লালধান
বৈজ্ঞানিক নাম- Oryza rufipogon Griff
ঝরাধান বা লালধানকে জংলী ধানও বলা হয়। এ ধান চাষাবাদযোগ্য ধানের মতই এবং এর সংগে প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন ঘটে থাকে। কিন্তু চাষযোগ্য ধানের সংগে বৈসাদৃশ্য এই যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধানগুলো পুরোপুরি পাকার আগেই ঝরে পড়ে এবং ছড়া খাড়া থাকে। অবশ্য যেগুলোতে ধান ঝরে পড়ে না সেগুলোর ছড়া নুয়ে পড়ে। কীলক মঞ্জরীগুলো শুংযুক্ত বা শুংবিহীন হতে পারে এবং শুংয়ের দৈর্ঘ্যের ব্যাপক তারতম্য ঘটে। পাকা ধানের খোসাগুলো খড়ের রং বা কালচে হয়। চালের বহিরাবরণ রঙিন। ইহা পাকার সময় ও বীজের বয়স অনুযায়ী তা ধূসর থেকে লাল বর্ণে রূপান্তরিত হয়। বীজগুলো মাটিতে বহুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে, কিন' যদি চাষাবাদযোগ্য ধানের মত কাটা ও ব্যবহার করা যায় তাহলে সুপ্ত অবস্থা ভেংগে দেয়া সমভব ।
ঝিল মরিচ
বৈজ্ঞানিক নাম Sphenoclea zeylanica Gaertn
ঝিল মরিচ মসৃণ, শক্ত, মাংসল, ফাঁপা, বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ও ০.৩-১.৫ মি উঁচু কান্ডসহ একটি খাড়া ও এক বর্ষজীবি চওড়া পাতা আগাছা। পাক মেরে সাজানো পাতাগুলো সাধারণ গোলাকার থেকে তলোয়ারাকৃতির, ১০ সেমি লম্বা এবং ৩ সেমি চওড়া। পাতাগুলোর আগা চিকন থেকে সূচাকৃতির। পাতার ছোট বোঁটা এবং নিখাঁজ কিনার রয়েছে।
সবুজ রঙের, পুষপবিন্যাস ৮ সেমি লম্বা বোঁটার উপর অবসি'ত। ইহা ৭.৫ সেমি লম্বা এবং ১২ মিমি চওড়া একটি গিজানো ছড়া। গাঢ় সাদা থেকে সবুজ বর্ণের ফূলগুলো প্রায় ২.৫ মিমি লম্বা এবং ২.৫ মিমি চওড়া হয়ে থাকে।
ফল একটি গোলাকার বীজকোষ, ৪-৫ মিমি চওড়া ও খাড়াভাবে বিভক্ত। এর হলদে বাদামী বর্ণের অসংখ্য বীজগুলো ০.৫ মিমি লমবা। বীজদ্বারা বংশ বিস্তার করে।
কেশুটি
বৈজ্ঞানিক নাম- Ecliptaalba (L.) Hassk
কেশুটি বর্ষজীবী অথবা বহুবর্ষজীবী একটি আগাছা। এটি অ্যাস্টারেসী পরিবারের অনর্-ভূক্ত। এটি মাটিতে শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ আগাছার পাতা ময়লা সবুজ রঙের ও খসখসে হয়। এর পুষপমঞ্জরী সরু ও পেয়ালা আকৃতির, দেখতে মেয়েদের নাকফুলের মতো। বৃতির মধ্যে সাদা রঙে ফুল ঘনভাবে সাজানো থাকে। পুষপমঞ্জরির এ আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখে একে সহজেই সনাক্ত করা যায়। মার্চ-এপ্রিলে এর চারা জন্মায় এবং জুন-জুলাইতে পরিপক্ক হয়। এরা সাধারণত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। আউশ ধানের জমিতে এ আগাছার প্রাদুর্ভাব হয়ে থাকে। এ আগাছার অভিযোজনের ক্ষমতার গুণে এরা ভিজা ও শুকনা উভয় মাটিতে জন্মাতে পারে এবং উঁচু ও নিচু জমিতে সমানভাবে সহজে বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিমাণে কেশুটির প্রাদুর্ভাবে ধানের ফলন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে ।
কচুরি পানা
বৈজ্ঞানিক নাম Eichhornia crassipes (Mart.) Solms
কচুরি পানা চড়হঃবফবৎরধপবধবপরিবারের অর্ন্তভূক্ত একটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ শ্রেণীর জলজ আগাছা। এরা পানির উপর ভাসমান অথবা কাদায় শিকড় ঢুকিয়ে পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে আধাস'লজ আগাছা হিসেবে বেঁচে থাকে। এর কান্ড খাটো এবং এতে সেটালন থাকে। কালো রঙের লোমযুক্ত সরু শিকড় কান্ডের নিচে গোছার মতো গঠন সৃষ্টি করে। পাতার ফলক কিডনির মতো বা গোলাকার। পাতার বোঁটা স্ফীত এবং এর উপর ভিত্তি করে কচুরিপানা পানিতে ভেসে থাকতে পারে। এরা দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে। একটি গাছ থেকে এক মৌসুমে অসংখ্য গাছ জন্মাতে পারে। এদের ফুল সাদা বা নীলাভ বেগুনি। পাপড়ির কেন্দ্র হলুদ রঙের আভাযুক্ত। সাধারণত সেটালনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। কখনো কখনো বীজের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার করে। এটি জলী আমন ক্ষেত ছাড়াও নিচু জমিতে আমন ধান ও বোরো ধানের ক্ষতি করতে পারে। নতুন পানির সাথে বোনা আমন ধানের জমিতে একবার কচুরি পানা ঢুকে গেলে সেখানে ফসল ফলানো কষ্টকর। কচুরি পানা শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পর্যন্ত গভীর পানির ধানের ক্ষতি করতে পারে ।
টোপাপানা/ক্ষুদেপানা
বৈজ্ঞানিক নাম- Pistia stratiotes L.
টোপাপানা অৎধপবধব পরিবারের অনর্-ভূক্ত একটি বহুবর্ষজীবী মুক্ত ও ভাসমান জলজ আগাছা। এর কান্ড ছোট আকারের এবং পাতা চক্রাকারে বাঁধাকপির পাতার মতো সাজানো অবস্থায় উৎপন্ন হয়। পাতাগুলো মখমলের মতো লোমযুক্ত এবং পাতার নিচের দিকে স্পষ্ট শিরাযুক্ত। সেটালন হলদে সবুজ রঙের এবং কালো লোমযুক্ত। প্রধানত সেটালনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এটি জলী আমন ধান ছাড়াও রোপা আমন ধানের ক্ষেতে বেশি পরিমাণে জন্মে ধানের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
চেচড়া
বৈজ্ঞানিক নাম -Scripus maritimus L
চেচড়া ঈুঢ়বৎধপবধব পরিবারের অন্তর্ভূক্ত একটি বর্ষজীবী সেজ জাতীয় আগাছা। এটি প্রায় ১.৫ মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড খাড়া, মসৃণ ও ত্রিকোণাকার। এরা ভিজা ও পানিযুক্ত মাটিতে বেশি পরিমাণ জন্মায়। এ আগাছা বোরো ও আমন ধানের জমিতে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। কখনো কখনো আউশ ধানে এদের পাওয়া যায়। তবে এ আগাছা বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি হয় এবং ধান ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এ আগাছা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। এরা সাধারণত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। কন্দ এবং সেটালনের মাধ্যমেও এদের বংশবৃদ্ধি ঘটতে পারে। এ আগাছা দমন করা বেশ কঠিন। জলাবদ্ধ/ভিজা কাদাময় জমিতে এ আগাছা বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
কাকপায়া ঘাস
বৈজ্ঞানিক নাম- Dactyloctenium aegyptium (L.) Willd..
কাকপায়া একটি বর্ষজীবী ঘাসজাতীয় আগাছা ও চড়ধপবধব পরিবারের অন-র্ভূক্ত। এটি প্রায় ২০-৪০ সেমি লম্বা হয়। এ আগাছার কান্ডের পূর্ব থেকে শিকড় জন্মায়। কান্ডে অনেক শাখা-প্রশাখা উৎপন্নের ফলে এক ধরনের গুচ্ছের সৃষ্টি হয়। এর ২-৭টি পুষপছড়া নিয়ে গঠিত পুষপবিন্যাস হাতের আংগুলের মতো বোঁটার আগায় সাজানো থাকে যা দেখতে কাকের পায়ের মতো। এটি বোনা আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। এর কারণে আউশ ধানের শতকরা ১০-৭৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।
গৈচা
বৈজ্ঞানিক নাম
গৈচা একটি বহুবর্ষজীবী ঘাসজাতীয় আগাছা এবং চড়ধপবধব পরিবারের অন-র্ভূক্ত। এর কান্ড মাটিতে শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধি পায় । সবুজ অথবা হালকা খয়েরি রঙের কান্ড বেশ শক্ত হয়। কান্ডের আগায় ৩-৬ সেমি লমবা দুু’টি পুষপমঞ্জরী হাতের আঙুলের মতো ছড়ানো থাকে। এ দু’টি স্পাইক দেখে সহজেই এদেরকে সনাক্ত করা যায়। এ ঘাস দেখতে অনেকটা দুর্বা ঘাসের মতো তবে আকারে কিছুটা বড়। এটি স্যাঁতস্যাঁতে বা জলাবদ্ধ জমিতে জন্মাতে পারে। সাধারণত বীজ ও কান্ডের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। এ আগাছা সরাসরি বোনা, ভিজা ও রোপা ধান ক্ষেতে জন্মাতে দেখা যায়। এরা ধানের সাথে প্রতিযোগিতা করে শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমিয়ে দিতে পারে ।
দমন ব্যবস্থাপনা
জৈবসার ও ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির সাথে আগাছার বংশ বিস্তারে সক্ষম বীজ ও কন্দ যেন মিশে বা লেগে না থাকে সেদিকে সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যার মধ্যে উঁচু জমিতে হালকা লাঙল ও আঁচড়া দিয়ে মাটি আলোড়িত করে আগাছা দমন করা যায়। এছাড়া কান্ডসহ হাত বা নিড়ানী দিয়ে তুলেও এ আগাছা দমন করা যায়।
ধানের জমিতে পানি জমা রাখা এবং ধান পাকার আগেই রগিং করে আগাছা দমন করা যায়।
আগাছা পরিসকারের সময় কন্দসহ হাত, নিড়ানী বা কাঁচি দিয়ে তুলে হলদে মুথা দমন করা যায় ।
কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এ আগাছা দমন করা যায় ।
একই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন করেও এ আগাছা দমন করা যায় ।
বীজ পাকার আগেই এ আগাছা তুলে ফেলা উচিৎ ।
আগাছা দমনের জন্য অনুমোদিত আগাছানাশক প্রয়োগ করা।
{বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট}
ধানের রোগ
ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগ (Bacterial Blight)
রোগের জীবাণু- Xanthomonas oryzae pv. oryzae
এটি ঝলসানো রোগ নামেও পরিচিত। পাতাপোড়া রোগের
ব্যাকটেরিয়া জীবাণু আক্রান- গাছ বা তার পরিত্যক্ত গোড়া, কুটা ও বীজ এবং আগাছার মধ্যেও থাকতে পারে। শিশির, সেচের পানি, বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ো হাওয়ার
মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের
দিকে হলদে পুঁতির দানার মত গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার
গায়ে লেগে থাকে। পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা
গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে এ রোগের জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ফলে গাছের
বিভিন্ন বয়সে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ (ক্রিসেক, পাতা পোড়া ও ফ্যাকাশে হলুদ) দেখা দেয়। বীজতলা থেকে চারা তোলার
সময় যদি শিকড় ছিড়ে যায় তখন রোপণের সময় ব্যাকটেরিয়া সে ক্ষতের মধ্য দিয়ে গাছের
ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া কচি পাতার ক্ষত স্থান দিয়েও প্রবেশ করতে
পারে।
আক্রান্ত গাছের নিচের পাতা প্রথমে নুয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। এভাবে গোছার সকল পাতাই
মরে যেতে পারে। এ অবস্থাকে ক্রিসেক বা নেতিয়ে পড়া রোগ বলা হয়। চারা বা প্রাথমিক কুশি
বের হওয়ার সময় গাছের পাতা বা পুরো গাছটি ঢলে পড়ে। মাঝে মাঝে আক্রমণ প্রবণ
জাতের ধানে পাতাগুলো ফ্যাকাশে হলদে রঙের হয়। গাছের বয়স্ক পাতাগুলো স্বাভাবিক সবুজ থাকে, কিন্ত কচি পাতাগুলো সমানভাবে ফ্যাকাশে হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। পাতা পোড়া রোগের
লক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমে পাতার কিনারা অথবা মাঝে নীলাভ সবুজ রঙের জলছাপের মত রেখা
দেখা যায়।
দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যে কোন
জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত পাতাটি ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণ প্রবণ জাতের
ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময়ে সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে
খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। রোগ সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়লে পুড়ে
গেছে বলে মনে হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- এ রোগ দমনের জন্য বিআর২ (মালা), বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর১৪, বিআর১৬, বিআর১৯ (মঙ্গল), বিআর২১ (নিয়ামত), বিআর২৬ (শ্রাবণী), ব্রিধান২৭, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩১, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান ৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান৪৪, ব্রিধান ৪৫ ও ব্রিধান৪৬ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করুন।
- ক্রিসেক আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
- জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
পাতার লালচে রেখা রোগ ((Bacterial Leaf Streak)
রোগের জীবাণু- Xanthomonas
oryzae pv. oryzaecola
এ রোগ সাধারণতঃ পত্রফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রথমে পাতার
শিরাসমূহের মধ্যবর্তী স'ানে সরু এবং হালকা দাগ
পড়ে। সূর্যের দিকে ধরলে এ
দাগের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে এবং পরিস্কার দেখা যায়। আসে- আসে- দাগগুলো বড়
হয়ে লালচে রং ধারণ করে এবং পাতার পার্শ্ববর্তী বৃহৎ শিরার দিকে ছড়াতে থাকে। আক্রমণ প্রবণ জাতে
ধানের পাতা পুরোটাই লালচে রঙের হয়ে মরে যেতে পারে। রোগ বিস্তারের অনুকুল অবস্থায় সারা মাঠ হলদে কমলা
রঙের হয়ে যায়। এ ব্যাকটেরিয়া গাছে ক্ষত বা পাতার কোষের
স্বাভাবিক ছিদ্র পথে প্রবেশ করে। পাতা পোড়া রোগের চেয়ে বেশি হলদে গুটিকা পাতার
উপর সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি এবং বাতাস এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।
এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন গুলে তাতে বীজ এক রাত
রেখে শোধন করা।
পোকা দ্বারা পাতায় যেন ক্ষতি হতে না পারে সেজন্য জমিতে পোকা
দেখা মাত্র কীটনাশক বা অন্য উপায়ে মেরে ফেলা।
নাড়া শুকিয়ে জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
এ রোগ প্রতিরোধশীল জাত যেমন বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর৯ (সুফলা), বিআর১০ (প্রগতি), বিআর১৪ (গাজী), বিআর১৬ (শাহীবালাম), বিআর২০ (নিজামী), বিআর২১ (নিয়ামত), বিআর২৪ (রহমত), ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩০,
ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮,
ব্রিধান৪০, ব্রিধান৪১,
ব্রিধান৪২
ইত্যাদি চাষ করা।
গুড়িপঁচা রোগ (Foot rot)
রোগের জীবাণু- Erwinia chrysenthemi rice pathovar
এ রোগ চারা ও কুশি অবস্থায় সাধারনত দেখা যায়। গাছের প্রাথমিক অবস্থায় পাতার খোল পঁচে
বাদামী রঙের হয়ে যায়। রোগের লক্ষণ তাড়াতাড়ি কান্ড, গিঁট এবং গাছের উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। কান্ড নরম হয়ে পঁচে যায়
ও সেখান থেকে বেশ দুর্গন্ধ (শামুক পচা গন্ধ) বের হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে প্রায় সবগুলো কুশি
পচে গিয়ে নুয়ে পড়ে অথবা টান দিলে সহজে উঠে আসে। গুড়িপঁচা সাধারণতঃ কুশি
অবস্থা থেকে ফুল হওয়া অবধি
দেখা যায়, কিন' যদি জমি জলমগ্ন থাকে তবে এ রোগ গাছের জীবন
চক্রের যে কোন সময় হতে পারে।
ব্যবস্থাপনা
- সেচ নিয়ন্ত্রণ করে জমি মাঝে মধ্যে শুকিয়ে নিলে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- এ রোগের লক্ষণ কোন একটি গাছে দেখা মাত্র তুলে ফেলা।
ব্লাস্ট রোগ (Blast)
রোগের জীবাণু- Pyricularia grisea
এই ছত্রাক জীবাণু ধান গাছের যে কোন অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে। এ রোগে প্রথমে পত্র
ফলকে অতি ছোট ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে। এ দাগের মাঝামাঝি অংশ প্রশস- হয় এবং দু’প্রান- সরু থাকে যাতে দাগটাকে মনে হয় অনেকটা
চোখের মত। বড় দাগগুলোর (০-১.৫ ০.৩-০.৫ সেন্টিমিটার)
কেন্দ্র ভাগ ধূসর বর্ণের হয়। আক্রমণ প্রবণ ধানের পাতা মরে যেতে পারে। কিন' প্রতিরোধক জাতের পাতার মধ্যে আলপিনের মাথার মত
ছোট বাদামি দাগকে বাদামি দাগ রোগ বলে ভুল হতে পারে।
ধানগাছের ব্লাস্ট রোগ কান্ডের গিঁটেও আক্রমণ করতে পারে। গিঁট পঁচে গিয়ে কালচে
হয় এবং সহজেই ভেঙ্গে যায়। ছড়া বা শিষের গোড়া আক্রান- হয়। আক্রান- অংশ কালচে হয়ে
ভেঙ্গে যেতে পারে যাকে শীষ ব্লাস্ট বলে। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার এবং বাতাসের
আর্দ্রতা এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়। এ ছাড়া রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে শিশির পড়া এ রোগের প্রকোপ
বাড়ায়। মাঠে এ রোগের আক্রমণ ব্যাপক হলে পুড়ে বসে
যাওয়ার মত হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।
- জমিতে সব সময় পানি রাখা।
- ব্লাস্ট প্রতিরোধক জাতের ধান বিআর৩, বিআর৫, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর২৫, বিআর২৬ ব্রিধান ২৮, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৩ ব্রি ধান ৪৪ এবং ব্রি ধান ৪৫ ইত্যাদি চাষ করা
খোলপোড়া রোগ (Sheath blight)
রোগ জীবাণু- Rhizoctonia solani
এ রোগে প্রাথমিক অবস্থায় পানির উপরিভাগে খোলের উপর পানি ভেজা হালকা
সবুজ রঙের দাগ পড়ে। ডিম্বাকৃতি বা বর্তুলাকার এ সব দাগ প্রায় ১
সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং বড় হয়ে দাগগুলো ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। কয়েকটি দাগ পরে একত্রে
মিশে যায়। প্রত্যেকটি দাগের সীমারেখা এবং রঙের বৈচিত্র্য
একটা আক্রান্ত এলাকার বৈশিষ্ট্যকে
ফুটিয়ে তোলে। তখন আক্রান্ত খোলটার উপর ছোপ ছোপ দাগ
মনে হয়। অনুকুল এবং আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত কান্ডের নিকটবর্তী
পাতাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ ফুল হওয়া থেকে
ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট
দেখা যায়। আক্রান্ত জমি মাঝে মাঝে পুড়ে বসে
যাওয়ার মত মনে হয় । রোগের প্রকোপ বেশি হলে ধান চিটা হয়ে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
রোগ সহনশীল জাত যেমন বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩১ ও ব্রি ধান৩২ চাষ করা যেতে পারে।
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে
ফেলা।
সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার
ব্যবহার করা।
ধানের জাত অনুসারে সঠিক দুরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)।
রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ দুই কিস্তিতে দিলে ভাল ফল পাওয়া
যায়।
প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক যেমন ফলিকুর এবং কনটাফ ৫০০ মিলি/হেক্টর
হারে প্রয়োগ করা।
রোগ দেখা দিলে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো।
ভূয়াঝুল বা লক্ষীর গু (False smut)
রোগের জীবাণু- Ustilaginoidea virens
লক্ষীর গু বা ভূয়াঝুল রোগ ধান পাকার সময় দেখা যায়। ছত্রাক ধানে চাল হওয়ার
শুরুতেই আক্রমণ করে এবং বাড়ন্ত চালকে নষ্ট করে বড় গুটিকা সৃষ্টি করে। গুটিকার ভেতরের অংশ
হলদে কমলা রং এবং বহিরাবরণ সবুজ অথবা কাল হয়। কচি গুটিকাগুলো ১ সেমি
এবং পরিপক্ক অবস্থায় আরও বড় আকারের হতে
পারে। এক রকমের আঠা জাতীয়
পদার্থ থাকার জন্য গুটিকা থেকে ক্ল্যামাইডোস্পোর জাতীয় অনুবীজ সহজে বের হয় না। সাধারণত: কোন শীষে
কয়েকটা ধানের বেশী আক্রমণ হতে দেখা যায় না।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
আক্রান্ত গাছ বা শীষ তুলে ফেলা এ রোগ দমনের সবচেয়ে ভাল উপায়।
পূর্বের ন্যায় বীজ শোধন দ্বারাও এ রোগ দমন করা যায়।
সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী মৌসুমে বপন করেও এ রোগ দমন
করা যায়।
বাদামীদাগ রোগ (Brown spot)
রোগের জীবাণু - Bipolaris oryzae
এ রোগের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ পাতায় এবং বীজের খোসায় দেখা
যায়। প্রথমে পাতার
বৈশিষ্ট্যগত দাগগুলো ডিম্বাকৃতি এবং আকারে ও আকৃতিতে তিল বীজের মত হয়। দাগগুলো আকৃতিতে প্রায়
অনেকটা একই রকমের এবং পাতার সমস্ত অংশ জুড়েই সমানভাবে দেখা যায়। নতুন দাগগুলো ছোট ০.০৫
থেকে ০.১ সেমি পরিধি বিশিষ্ট গোলাকার এবং সাধারণতঃ গাঢ় বাদামী রঙের হয়। বয়স্ক দাগ ০.৪-১ সেমি x ০.০১-০.২ সেমি আকারের এবং বাদামী রঙের হয়। অধিকাংশ দাগের কিনারা
হালকা বাদামী রঙের হয়। দাগগুলো বড় হয় এবং সরু বাদামী দাগের মত লম্বা
হয় না। ব্লাস্টের দাগের যেমন কেন্দ্র বেশীর ভাগ ধূসর
বা সাদা হয় বাদামী দাগ রোগের কেন্দ্র ভাগের অধিকাংশই থাকে বাদামী রঙের। বেলে জাতীয় মাটিতে এবং
যে মাটিতে নাইট্রোজেন ও পটাশ সার কম সে সব জমিতে এ রোগ বেশী হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা।
- সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
- সুস' গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- থায়োফানেট মিথাইল নামক কার্যকরী উপদান বিশিষ্ট ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করা।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে রাখা।
- জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করা।
সরু বাদামী দাগ রোগ (Narrow brown spot)
রোগ জীবাণু- Cercospora oryzae
এ রোগের ফলে পাতার মধ্যে ছোট, সরু ও চিকন লম্বা-লম্বি বাদামী দাগ দেখা যায় (ছবি ৮৬)। এ ছাড়াও পাতার খোলে, বীজের বোঁটায় এবং ধানের তুষের উপর এ রোগের
লক্ষণ দেখা যেতে পারে। লম্বা দাগগুলো পাতার শিরার সমান্তরালে থাকে। এ দাগগুলো সাধারণতঃ
২-১০ মিলিমিটার লম্বা এবং ১ মিলিমিটার চওড়া হয়। কিন্ত আক্রমণ প্রবণ জাতের
ধানে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হালকা বাদামী রঙের হয়। দাগের কেন্দ্রটা হালকা
রঙের এবং সরু। সাধারণতঃ এই বাদামী দাগ লাল বাদামী এবং দাগের
কিনারা হালকা রঙের হয়ে থাকে।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- আক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।
- সুষম পরিমিতভাবে সার ব্যবহারে এ রোগ আয়ত্বে রাখা যায়।
কান্ড পঁচা রোগ (Stem rot)
রোগের জীবাণু- Sclerotium oryzae
এ রোগের ছত্রাক সাধারণতঃ জমির পানির উপরের তল বরাবর কুশির
বাইরের দিকের খোলে আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে। প্রথমে গাছের বাইরের
খোলে কালচে গাঢ়, অনিয়মিত দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে বড় হয়। পরে ছত্রাক গাছের
কান্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং পচিয়ে ফেলে। যার ফলে গাছ হেলে ভেঙ্গে পড়ে এবং ধান চিটা ও
অপুষ্ট হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- জমি শুকিয়ে নাড়া পোড়ানো।
- মাঝে মাঝে রোপা জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি শুকানো।
- ঘন করে চারা না লাগানো।
- সুষম সার ব্যবহার করা।
- এ রোগের প্রতি কিছুটা সহনশীল জাতের ধান যেমন- বিআর ১১, বিআর ১৪, বিআর২৯, ব্রিধান ৩০, ব্রিধান ৩১, ব্রিধান ৪০, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান ৪৪, ব্রিধান ৪৫, ব্রিধান ৪৬, ব্রিধান ৪৭ ইত্যাদির চাষ করা।
- হেক্টর প্রতি ২.২৫ কেজি থায়োফানেট মিথাইল নামক কার্যকরী উপাদান বিশিষ্ট ছত্রাকনাশক ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করা।
খোলপঁচা রোগ Sheath rot)
রোগ জীবাণু- Sarocladium oryzae
এ রোগ ধান গাছে থোড় হওয়ার শেষ পর্যায়ে এবং সর্বোপরি খোল
অর্থাৎ যে খোল শীষকে আবৃত করে রাখে সেই খোলে হয়। দাগটা প্রথমতঃ গোলাকার
বা অনিয়মিত এবং আকারে ০.৫-১.৫ সে মি লম্বা হয়। কেন্দ্র ধূসর এবং
কিনারা বাদামী রঙের অথবা দাগটা ধূসর বাদামী রঙের হতে পারে। দাগগুলো একত্রে হয়ে বড়
হয় এবং সম্পূর্ণ খোলেই ছড়াতে পারে। আক্রমণ বেশী হলে শীষ বা ছড়া আংশিক বের হয়। শীষ আবৃত খোল পঁচে যায়
এবং সাদা রঙের ছত্রাক খোলের উপর মাঝে মাঝে দেখা যায়। আংশিক বের হওয়া শীষে
খুব কম সংখ্যক ধান পুষ্ট হয়। সাধারণতঃ আক্রান্ত গাছের নীচের দিকে মাজরা
পোকার আক্রমণ বা অন্য কোন আঘাত বা ক্ষত দেখা যায়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
সুস্থবীজ ব্যবহার করা।
খড়কুটা জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।
ইউরিয়া সারের ব্যবহার পরিমিত রাখা।
বীজ শোধন করা।
পাতার ফোস্কাপড়া রোগ (Leaf scald)
রোগের জীবাণু- Macrodochium oryzae
পাতার ফোস্কাপড়া একটি বীজবাহিত রোগ। এ রোগের লক্ষণ সাধারণত
বয়স্ক পাতার আগায় দেখা যায় (ছবি ৯১)। মাঝে মাঝে পাতার মাঝখানে বা কিনারেও হতে পারে
(ছবি ৯২)। দাগ দেখতে অনেকটা জল ছাপের মত মনে হয় এবং বড়
হয়ে অনেকটা ডিম্বাকৃতি বা আয়তাকার এবং জলপাই রঙের মত মনে হয়। দাগের ভেতর গাঢ় বাদামী
চওড়া রেখা এবং হালকা বাদামী রেখা পর পর বেস্টন করে থাকে। তাতে কিছুটা ডোরাকাটা
দাগের মত মনে হয়। বেশী আক্রমণে পাতা শুকিয়ে খড়ের রঙের মত হয় এবং
দাগের কিনারা হালকা বাদামী এলাকার মত দেখা যায়। দাগের ক্রমাগত বৃদ্ধি
পুরো পাতাতেই ছড়াতে পারে। পাতার ফোস্কাপড়া রোগ চেনার সহজ উপায় হলো আক্রান্ত পাতা কেটে স্বচ্ছ
পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে যদি পুঁজ বা দুধ জাতীয় পদার্থ কাটা অংশ থেকে বের
হয় তবে বুঝতে হবে একা ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগ। আর যদি কোন কিছু বের না
হয় তবে সেটা পাতার ফোস্কা রোগ।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- সুস্থবীজ ব্যবহার করা।
- পরিমিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করা।
- বীজশোধন করা।
- নাড়া জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।
টুংরো রোগ (Tungro)
রোগের কারণ-Tungro virus
এশিয়া মহাদেশের উঞ্চ অঞ্চলে টুংরোই সবচেয়ে প্রধান ভাইরাস
রোগ। বাংলাদেশে প্রায় ২/৩
বছর পর পর বিস-ীর্ণ এলাকা জুড়ে রোগটি দেখা দেয় এবং এতে প্রচুর ফলন কমে যায়।। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম,
বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর জেলায় টুংরোর প্রাদুর্ভাব হয়ে আসছে। এ রোগ হলে ধান গাছের
বাড়তি কমে যায় এবং কুশি কম হয়। আক্রান্ত পাতা ও পাতার খোল খাটো
হয়। কচি পাতাগুলো পুরাতন
পাতার খোলের মধ্যে আটকে থাকে। নুতন পাতা খাটো ও চওড়া হয় এবং মোচড় খেয়ে যায়। এসব কারণে গাছ বাড়তে
পারে না। আক্রান্ত পাতা প্রথমে হালকা হলুদ
এবং পরে গাঢ় হলুদ থেকে কমলা বর্ণের হয়ে যায়। ধানের জাত বিশেষ পাতার রং ভিন্ন ভিন্ন হয়ে
থাকে। পাতা ও কান্ডের মধ্যবর্তী
কোন বেড়ে যায়। আক্রান্ত ধান গাছ পাকা পর্যন্ত বাঁচতে পারে তবে আক্রমণ
তীব্র হলে গাছগুলো শুকিয়ে মরার মত হয়ে যায়। হালকাভাবে আক্রান্ত গাছ বেঁচে থাকে তবে
তাতে ২-৩ সপ্তাহ পর ফুল আসে এবং ফলন অনেক কম হয়। এসব গাছে ধানের ছড়া
আংশিক বের হয়, দানাগুলো কালো ও অপুষ্ট
হয়। দেরীতে আক্রান্ত গাছে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ অনেক
ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যায়। টুংরো আক্রান্ত ধান গাছ কাটার পর তার
মুড়ি ধানেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
সবুজ পাতাফড়িং টুংরো রোগ ছড়ায়। বীজতলাতেই প্রথম আক্রমণ
শুরু হয়। সবুজ পাতাফড়িং বীজতলার চারাতে ভাইরাস সঞ্চালন
করে। এসব চারা রোপণ করার
কিছুদিন পরই তাতে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেক সময় বীজতলাতেই
টুংরো আক্রমণে হলুদ বর্ণের চারা দেখা যায়। রোপণের পর কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় ক্ষেতে বাহক পোকা
থাকলে নুতন নুতন গাছে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই বীজতলায় এবং কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় সবুজ পাতাফড়িং দেখা
মাত্র দমন করতে হবে। টুংরো রোগের বিশেষ লক্ষণ হলো ক্ষেতের সব গাছেই
এক সংগে আক্রমণ হয় না। বরং বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু গাছে প্রথমে হলুদ
হয়ে আস্তে আস্তে মরে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
রোগ সহনশীল জাত যেমন বিআর২২ বিআর২৩, ব্রিধান২৭,
ব্রিধান৩১
ও ব্রিধান৪১ ইত্যাদি চাষ করা।
হাত জাল দিয়ে বা অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে সবুজ পাতাফড়িং
দমন করতে হবে। আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে সবুজ পাতাফড়িং মেরে
ফেলা যায়।
টুংরো আক্রান্ত জমির আশে পাশে বীজতলা করা থেকে বিরত
থাকতে হবে,
আড়ালি ঘাস, বাওয়া ধান নিধন করতে
হবে।
হলদে বামন (Yellow dwarf)
রোগের কারণ- মাইকোপ্লাজমা
আক্রান্ত গাছে নতুন প্রসারিত পাতা হলদে বা পাংশু রঙের হয়। পাতার রং হলদে সবুজ
থেকে সাদাটে সবুজ অথবা ফ্যাকাশে হলদে হতে পারে। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে
আক্রান্ত গাছ বিবর্ণ হয়। গাছ খুব খাটো এবং
অত্যধিক কুশি হয়। পাতাগুলো নরম হয়ে ঝুলে পড়ে। আক্রান্ত গাছ মরে যেতে পারে অথবা
ধান পাকা পর্যন্ত বাঁচতেও পারে। আক্রান্ত গাছে খুব কম ছড়া হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে লক্ষন বলা যায় না, কিন্ত পরবর্তীতে কাটার পর গোড়া থেকে গজানো গাছে লক্ষণ ভালভাবে
প্রকাশ পায়।
হলদে বামন সংঘটক মাইকোপ্লাজমা সবুজ পাতাফড়িং দ্বারা ছড়ায়। যতদিন জীবিত থাকে বাহক
পোকা এ ভাইরাসকে শরীরে ধারণ করতে এবং সুস্থগাছ খেয়ে রোগ ছড়াতে পারে, কিন্ত বাহক পোকা এ রোগ বংশ পরস্পরায় ছড়ায় না।
দমন ব্যবস্থাপনা
এ রোগের দমন ব্যবস্থা হিসেবেও টুংরো রোগের অনুরূপ সবুজ পাতাফড়িং দমন করা উচিত।
উফরা রোগ (Ufra)
রোগের জীবাণু- Detylanchus angustus
পানি ও মাটি দ্বারা পরিবাহিত এ কৃমি গাছের উপরের অংশ আক্রমণ
করে। এ কৃমি ধান গাছের পাতায়
কচি অংশের রস শুষে খায়, ফলে প্রথমত পাতার গোড়ায়
সাদা ছিটা-ফোটা দাগের মত দেখায়। সাদা দাগ ক্রমে বাদামী রঙের হয় এবং পরে এ দাগ
বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটাই শুকিয়ে ফেলে। অধিকাংশ ছড়াই মোচড় খেয়ে
যায় ও ধান চিটা হয়। কোন কোন ছড়া মোটেই বের হয় না। এ রোগের জীবাণু জল
স্রোতের সাথে এক জমি থেকে অন্য জমিতে যায়। বিশেষতঃ জলী আমন ধানে এরূপ হয়ে থাকে।
দমন ব্যবস্থাপনা
মৌসুম শেষে চাষ দিয়ে জমি ও নাড়া শুকাতে হবে।
নাড়া জমিতেই পোড়াতে হবে।
জলী আমন ধান দেরীতে বুনলে এ রোগ কম হয়।
শস্য পর্যায়ে ধান ছাড়া অন্য ফসল করা উচিত।
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রমণ শুরু হলে আগা ছেটে দেয়ো যেতে পারে।
বীজতলা এবং মূলজমিতে এ রোগ দেখা দিলে বিঘা প্রতি ২.৫-৩.০
কেজি হারে ফুরাডান অথবা কুরাটার ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
শিকড় গিঁট (Root knot)
রোগের জীবাণু- Meloidogyne
graminicola|
এ রোগ সাধারণত: বীজতলায় এবং বোনা আউশ ক্ষেতে চারা অবস্থায় দেখা যায়। এই কৃমি ধান গাছের
প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো মাটিতে গাছের
শিকড়ে আক্রমণ করে। আক্রান্ত গাছ বেঁটে, পাতা হলদে এবং শুকিয়ে যেতে থাকে। আক্রান্ত গাছের শিকড়ের মধ্যে
গিঁট দেখা যায়। গাছ বাড়তে পারে না এবং দুর্বল হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- আক্রান্ত বীজতলা বা জমি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে আক্রমণ প্রকোপ কমানো যায়।
- চাষাবাদে শষ্যক্রমে পরিবর্তন আনা।
- বীজতলা বা আউশ ক্ষেতে বিঘা প্রতি ২.৫-৩.০০ কেজি ফুরাডান অথবা কুরাটার ছিটিয়ে দেওয়া।
বাকানী বা গোড়াপঁচা রোগ (Bakanae)
রোগের জীবাণু- Fusarium
moniliformae
এটি একটি বীজবাহিত রোগ। এ রোগের সবচে’ স্পষ্ট লক্ষণ হলো আক্রান্ত চারা স্বাভাবিক চারার
চেয়ে প্রায় দ্বিগুন লম্বা হয় এবং আক্রান্ত চারার পাতা হলদে সবুজ হয়। আক্রান্ত চারাগুলো বেশী দিন
বাঁচে না। আক্রান্ত গাছের কুশি লিকলিকে হয়। এদের ফ্যাকাশে সবুজ
পাতা অন্যান্য গাছের উপর দিয়ে দেখা যায় এবং নীচের দিকে গিঁটে অস্থানিক শিকড়ও দেখা যেতে
পারে। আক্রান্ত গাছ যদি কোন রকমে বাঁচে
তবে সেগুলো থেকে চিটা ধান হয়। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার এবং
৩০-৩৫০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এ রোগের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
- ব্যাভিষ্টিন অথবা নোইন নামক ছত্রাকনাশক ৩ গ্রাম ১ লিটার পানিতে গুলে বীজ এক রাত ভিজিয়ে রাখা।
- একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- কিছুটা প্রতিরোধ সম্পন্ন ধানের জাত যেমন- বিআর ১৪, ব্রিধান ১৮, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান ৪৪ ও ব্রিধান ৪৫ এর চাষ করা।
- বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।
No comments:
Post a Comment