গম
পুষ্টি মূল্যঃ গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.১
গ্রাম, শর্করা
৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম
৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১
০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৯
গ্রাম, খনিজ
পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।
ভেষজ গুনঃ
ব্যবহারঃ গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের
কুঁড়া গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য
বেশী উপযোগী। লোনা
মাটিতে গমের ফলন কম হয়।
জাত পরিচিতিঃ বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন,
আকবর,
অঘ্রাণী
ও প্রতিভা রয়েছে। তাছাড়া
সৌরভ (বারি গম-১৯) ও গৌরব (বারি গম-২০) নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত অনুমোদিত
হয়েছে।
গমের জাত
কাঞ্চনঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক ইউপি-৩০১ এবং সি-৩০৬
এর মধ্যে সংকরায়ণ
করে কাঞ্চন জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ জাত ১৯৮৩ সালে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা
৯০-১০০ সেমি। কুশির
সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের
নিশান পাতা খাড়া। শীষ
বের
হতে ৬০-৬৮ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে। দানা সাদা
এবং হাজার
দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। অন্যান্য
জাতের তুলনায় দানা আকারে বড়। চারা আবস্থায় প্রাথমিক কুঁশি মাটির উপরে অবস্থান করে। বোনা থেকে
পাকা পর্যন্ত ১০৬-১১২
দিন সময় লাগে। এ
জাতটি দীর্ঘ সময় ধরে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্তমানে পাতার মরিচা দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাতটির ফলন কিছুটা হ্রাস
পেয়েছে। উন্নত
পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৩.৫-৪.৬ টন ফলন হয়। জাতটি দেশের
সকল অঞ্চলে
চাষের জন্য উপযোগী। বর্তমানে
সারা দেশে কাঞ্চন গম খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায়
কাঞ্চন গমের আবাদ হচ্ছে।
আকবরঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (ঈওগগণঞ) মেক্সিকোতে ও
টোবারী নামাক
২টি জাতের মধ্যে সংকরায়ণের পর একটি কৌলিক সারি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে
বাছায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতটি আকবর নামে ১৯৮৩ সালে
অসুমোদিত হয়। এ
জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। পাতা কিছুটা
হেলানো। নিশান পাতা
খুবই চওড়া ও লম্বা। শীষ
বের হতে ৫০-৫৫ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানা সাদা,
আকারে
মাঝারি এবং হাজার
দানার ওজন ৩৭-৪২ গ্রাম। পাতার
গোড়ায় সাদা অরিকল থাকে। ফসল
বোনা থেকে কাটা
পর্যন্ত ১০৩-১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.৫ টন হয়। জাতটি পাতার
দাগ রোগ সহনশীল। বৃহত্তর
ময়মনসিংহ, যশোর,
কুষ্টিয়া
ও খুলনা জেলায় এ জাতের ফলন বেশী হয়। তবে আকবর জাতের গম দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষের জন্য
উপযোগী।
অঘ্রাণীঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র, মেক্সিকো হতে
সনোরা/পি ৪১৬০ ই/ইনিয়া কৌলিক সারিটি ১৯৮২ সালে বাছাইকরণ নার্সারীর মাধ্যমে
বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৮৭ সালে অঘ্রাণী নামে তা অনুমোদন লাভ করে। এ জাতের
গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০
সেমি, কুশির
সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা
কিছুটা হেলানো, নিশান পাতা বড়। গাছের পাতা ও কান্ডে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু লক্ষ্য করা যায়। শীষ বের হতে
৫৫-৬০
দিন সময় লাগে। প্রতি
শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানার রং সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন
৩৮-৪২ গ্রাম। পাতার
গোড়ায় বেগুনি অরিকল থাকে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩-১১০
দিন সময় লাগে। উন্নত
পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন হয়। জাতটি পাতার
দাগ (ব্লাইট রোগ সহনশীল)। দেরীতে বপনের জন্য অঘ্রাণী জাতের গম বিশেষভাবে উপযোগী।
প্রতিভাঃ থাইল্যান্ড হতে ১৯৮২ সালে প্রেরিত বাছাইকরণ নার্সারীতে কে-ইউ
১২ নামক একটি কৌলিক
সারি বাংলাদেশে বাছায় করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা প্রতিভা নামে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা
৮৫-৯৫ সেমি। কুশির
সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের
নিশান পাতা
খাড়া। শীষ বের হতে
৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ
লম্বা ও প্রতি শীষে ৩৫-৪৫ টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে বড় ও হাজার দানার ওজন ৪২-৪৮ গ্রাম। ফসল বোনা থেকে
পাকা পর্যন্ত ১০৫-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৮-৪.৫ টন ফলন
পাওয়া যায়।
গমের
প্রতিভা জাত পাতার মরিচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।প্রতিভা জাতের গম দেশের সকল অঞ্চলে চাষ
করা যায়।
সৌরভঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে নেকোজারী ও ভেরী
জাতের মধ্যে সংকরায়ণকৃত
একটি কৌলিক সারি ১৯৮৯ সালে এদেশে এনে বাছাই করা হয় যা ১৯৯৮ সালে সৌরভ (বারি
গম-১৯) নামে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা
৫-৬টি। পাতা চওড়া,
হেলানো
ও গাঢ় সবুজ। নিশান
পাতা চওড়া ও হেলানো। নিশান পাতার
নীচের তলে মোমের মতো পাতলা আবরন থাকে। কান্ড মোটা ও শক্ত,
ঝড়
বৃষ্টিতে হেলে পড়ে না। নীচের
গ্লুমের ঠোঁট বড়, প্রায় ৫ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা,
প্রতিটি
শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৮টি, দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। বোনা থেকে
পাকা পর্যন্ত
১০২-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত
পদ্ধতিতে আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫-৪.৫ টন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার
দাগ রোগ সহনশীল এবং পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী। সৌরভ গম
দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী।
গৌরভঃ আন্তর্জতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে টুরাকো ও চিলেরো জাতের
মধ্যে সংকরায়ণকৃত
একটি কৌলিক সারি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। খুব উৎপাদনশীল জাত
হিসেবে
সারিটি বাছায় করা হয় যা ১৯৯৮ সালে গৌরব (বারি গম-২০) নামে সারা দেশে
চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছের উচ্চতা ৯০-১০২ সেমি। কুশি ৫-৬টি। পাতা গাঢ়
সবুজ। নিশান পাতা
খাড়া, সরু
ও ইষৎ মোড়ানো। নীচের
গ্লুমের ঠোঁট
ছোট প্রায় ২ মিমি। শীষ
বের হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, অগ্রভাগ সরু। প্রতি শীষে
৪৫-৫০টি দানা থাকে। দানার
রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৮ গ্রাম। জীবনকাল ১০০-১০৮ দিন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি
৩.৬-৪.৮ টন ফলন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী এবং পাতার
দাগ রোগ সহনশীল। এ
জাতটি তাপ সহিষ তাই দেরীতে বপন করলে ভাল ফলন দেয়। বর্তমানে গম
জাতসমূহের তুলনায় এ জাত ১০-১২ ভাগ বেশী ফলন দেয়।
বপনের সময়ঃ গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক
মাসের শেষ থেকে
অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ
পর্যন্ত)। যে সব এলাকায়
ধান কাটতে ও জমি তৈরী করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন,আকবর,
অঘ্রাণী,
প্রতিভা
ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
বপনের পদ্ধতিঃ সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের
জন্য জমি তৈরীর
পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরী করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ
বুনতে হয়। সার
ব্যবস্থাপনাঃ সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং
সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে
মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী
এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া
চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি,
এমওপি
ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গম চাষে নীচে
উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
সারের নাম সারের পরিমান/শতকে সেচসহ সেচছাড়া সারের পরিমান/হেক্টর
সেচসহ সেচছাড়া ইউরিয়া ৭২৯-৮৯১ গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ১৮০-২২০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি
টিএসপি ৫৬৭-৭২৯
গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ১৪০-১৮০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি এমপি ১৬২-২০২ গ্রাম ১২১-১৬২
গ্রাম ৪০-৫০ কেজি ৩০-৪০ কেজি জিপসাম ৪৪৫-৪৮৬ গ্রাম ২৮৩-৩৬৪ গ্রাম ১১০-১২০ কেজি
৭০-৯০ কেজি গোবর/কম্পোষ্ট ২৮-৪০ কেজি ২৮-৪০ কেজি ৭-১০ টন ৭-১০ টন
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ
মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের
প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ
গমের শীষ
বের হওয়ার সময়। (বপনের
৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে। জমিতে আগাছা
দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
গমের পাতার মরিচা রোগ দমনঃ পাক্সিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের
আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে
এই দাগ
মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে
মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব
পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
১. রোগ প্রতিরোধী গমের জাত কাঞ্চন, আকবর,
অঘ্রাণী,
প্রতিভা,
সৌরভ ও
গৌরবের চাষ
করতে হবে। ২. সুষম হারে
সার প্রয়োগ করতে হবে। ৩.
টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর
২-৩ বার স্প্রে
করতে হবে
গমের পাতার দাগ রোগ দমনঃ বাইপোরারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ
ঘটায়। গাছ মাটির উপর
আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে
দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু
বীজে কিংবা
ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ
বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকারঃ
১. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ২. গাছের
পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ৩. প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম
ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। ৪. টিল্ট-২৫০
ইসি (০.০৪%) এক মিলি প্রতি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩
বার স্প্রে করতে হবে।
গমের গোড়া পচা রোগ দমনঃ স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা
গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ়
বাদামি
বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্তস্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে
পাতা
শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের
জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত
বৃষ্টির পানি, সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকারঃ
১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা,
সৌরভ ও
গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. মাটিতে সব সময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। ৩. ভিটাভেক্স-২০০
নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে
হবে।
গমের আলগা ঝুল রোগ দমনঃ আসটিলেগো ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ
রোগ হয়। গমের
শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত
ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে
যায় এবং দেখতে
কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের
বীজকণা সহজেয় বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু
বীজের ভ্রুণে
জীবিত থাকে। পরবর্তী
বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে।
প্রতিকারঃ
১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা,
সৌরভ ও
গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ৩.
ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
গম বীজের কালো দাগ রোগ দমনঃ ডেক্সলেরা প্রজাতির ও অলটারনারিয়া
প্রজাতির ছত্রাক
দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ
রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে
দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের
জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
১. সুস্থ্য বীজ সংগ্রহ করে বপন করতে হবে। ২.
ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে
হবে।
ফসল সংগ্রহঃ চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ
থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়।
বীজ সংরক্ষণ
পদ্ধতি
* ধাতব/প্লাস্টিকের ড্রাম, টিনের পাত্র ও পলিথিন ব্যাগ বীজ সংরক্ষণের জন্য উত্তম।
* ভালোভাবে
শুকানো বীজ দ্ধারা পাত্র পরিপূর্ণ করুন যেন পাত্রে কোনরূপ খালি বা ফাঁকা জায়গা না
থাকে।
* বীজের পরিমান পাত্রের ধারন ক্ষমতার
চেয়ে কম হলে বীজ এর উপর একটি মোটা পলিথিন বিছিয়ে
উপরের ফাঁকা জায়গা শুকনো বালি, তষ
বা ছাই দিয়ে পাত্রটি ভর্তি করুন।
* বীজ
ভর্তি পলিথিন ব্যাগের মুখ আলাদাভাবে বেঁধে চটের বস্তার ভিতর ঢুকিয়ে রাখুন
* বীজ ভর্তি পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ
করে রাখুন যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। পাত্র মাচার উপরে এবং খড়ের
দেয়ালে/বেড়া থেকে একটু দূরে রাখা উত্তম। খেয়ার রাখতে হবে বীজসহ পাত্রগুলি যেন
মাটির সংস্পর্শে না
আসে।
* এভাবে
সংরক্ষিত বীজ বপনের আগ পর্যন্ত আর রোদে শুকানোর প্রয়োজন নেই।
ইঁদুর দমন
ইঁদুর গমের অন্যতম শত্রু এবং অতি চালাক প্রাণী। তাই
নিয়মিত গম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন
পর্যবেক্ষণ করে বিষটোপ (জিংক ফসফাইড), ফাঁদ, গ্যাস (ফসটক্সিন) ট্যাবলেট, গর্তে পানি ঢালা ইত্যাদি পদ্ধতি
ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করুন। গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহারের
ক্ষেত্রে জমির সব পুরাতন গর্ত ভালভাবে বন্ধ করে নতুন তৈরি গর্তের মুখের ভিতর গ্যাস ট্যাবলেট ঢুকিয়ে গর্তের
মুখটি শক্ত করে বন্ধ
করুন।
বীজ শুকানো ও বাছাই
* মাড়াইকৃত
বীজ সংরক্ষণের আগে কয়েকদিন ভালভাবে রোদে শুকিয়ে নিন।
* সংরক্ষণের পূর্বে চালুনী দিয়ে চেলে পুষ্ট বীজ বাছাই করুন।
* ধাতব পাত্র ছাড়া অন্য যে কোন পাত্রে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদে শুকানোর পর বীজ ঠান্ডা করুন।
* বীজ দাঁতে চিবিয়ে নিশ্চিত হন যে, বীজগুলো ভালোমত শুকানো হয়েছে
* সংরক্ষণের সময় বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকা উত্তম।
* সংরক্ষণের পূর্বে চালুনী দিয়ে চেলে পুষ্ট বীজ বাছাই করুন।
* ধাতব পাত্র ছাড়া অন্য যে কোন পাত্রে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদে শুকানোর পর বীজ ঠান্ডা করুন।
* বীজ দাঁতে চিবিয়ে নিশ্চিত হন যে, বীজগুলো ভালোমত শুকানো হয়েছে
* সংরক্ষণের সময় বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকা উত্তম।
No comments:
Post a Comment